মার্কিন সামরিক স্কুলে পাঠদানে বিভ্রাট! শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ক্ষোভ

মার্কিন সামরিক স্কুলগুলোতে ভিন্নমত দমনের অভিযোগ, প্রতিবাদে সোচ্চার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পরিচালিত স্কুলগুলোতে (DoDEA) সম্প্রতি গৃহীত কিছু নীতির কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে অসন্তোষ। মূলত, দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি নির্বাহী আদেশকে কেন্দ্র করে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

এই আদেশে বৈচিত্র্য, সমতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক (Diversity, Equity, and Inclusion – DEI) কার্যক্রমের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এর ফলস্বরূপ, বিশ্বজুড়ে অবস্থিত DoDEA স্কুলগুলোতে পাঠ্যক্রম পরিবর্তন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে মতের অমিল এবং লাইব্রেরি থেকে কিছু বই সরিয়ে ফেলার মতো ঘটনা ঘটছে।

এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

জানা গেছে, এই নীতিমালার কারণে অনেক স্কুলে ‘অ্যাডভান্সড প্লেসমেন্ট’ (AP) সাইকোলজি’র মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পড়ানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, ব্ল্যাক হিস্টরি মান্থের মতো কর্মসূচিগুলোও সীমিত করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের বিদ্যালয়ে ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ সংকুচিত করা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী সিএনএনকে জানায়, “আমাদের স্কুলগুলোকে কোনো রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে পরিণত হতে দিতে চাই না।”

জার্মানিতে বসবাসকারী এক অভিভাবক সিএনএনকে জানান, “এই নীতিগুলো সম্ভবত ইউরোপে বসবাসকারী মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্য এবং তাদের পরিবারের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়নি।” অভিভাবকদের অভিযোগ, এই ধরনের সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগকে সীমিত করছে।

শিক্ষার্থীদের এই উদ্বেগের প্রতিক্রিয়ায়, বিশ্বের বিভিন্ন DoDEA স্কুলে সম্প্রতি প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, ইংল্যান্ড এবং জাপানের স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ দেখায়।

বিক্ষোভকারীরা তাদের অধিকার রক্ষার জন্য এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দাবি জানায়।

তবে, DoDEA কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত সুযোগ-সুবিধা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। DoDEA-এর মুখপাত্র উইল গ্রিফিন সিএনএনকে বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি উপযুক্ত শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি, যেখানে সবাই শিখতে ও বেড়ে উঠতে পারবে।”

তিনি আরও জানান, AP সাইকোলজি কোর্সটি পুনরায় চালু করার বিষয়ে কলেজ বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

এই বিষয়ে DoDEA মুখপাত্রের বক্তব্য পাওয়া গেলেও, অনেক অভিভাবক মনে করেন, নীতি-নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।

তারা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে তাদের সন্তানেরা অন্যান্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের তুলনায় পিছিয়ে পড়বে।

অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষকদেরও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষকদের এখন ট্রান্সজেন্ডার শিক্ষার্থীদের জন্মগত নামের পরিবর্তে তাদের পছন্দের নাম ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।

দক্ষিণ কোরিয়ার একটি স্কুলের শিক্ষার্থী জানায়, তাদের বিদ্যালয়ে ট্রান্সজেন্ডার শিক্ষার্থীদেরকে তাদের জন্মগত নাম ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে, যা তাদের জন্য হতাশাজনক।

এ বিষয়ে DoDEA মুখপাত্র উইল গ্রিফিন আরও জানান, শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ কর্মসূচির কারণে স্কুলের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

তবে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে নাগরিক অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য অন্যান্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবা হচ্ছে।

তথ্যসূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *