কাশ্মীরে বন্দুকযুদ্ধ: নিহত ৩ বিদ্রোহী, শহীদ ১ ভারতীয় সেনা

কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে তিন ‘বিদ্রোহী’ নিহত, এক ভারতীয় জওয়ানের মৃত্যু

জম্মু ও কাশ্মীর উপত্যকায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে পৃথক সংঘর্ষে অন্তত তিনজন সন্দেহভাজন বিদ্রোহী এবং এক ভারতীয় সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাশ্মীর সফরের কয়েক দিনের মধ্যেই এই ঘটনাগুলো ঘটল।

শনিবার ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বুধবার কাশ্মীরের দক্ষিণাঞ্চলে কিশতওয়ার এলাকার একটি দুর্গম জঙ্গলে বন্দুকযুদ্ধের পর তিন জঙ্গিকে তারা নিকেশ করতে সক্ষম হয়েছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেবিএস রাঠি সাংবাদিকদের জানান, সেনাদের ‘অসাধারণ কৌশলগত দক্ষতা’ ছিল। তিনি আরও বলেন, “বন্দুকযুদ্ধে তিন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।”

ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাধারণত ‘জঙ্গি’ বোঝাতে এই শব্দটি ব্যবহার করে। সেনাবাহিনীর হোয়াইট নাইট কর্পস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (X) জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও ‘যুদ্ধ সরঞ্জাম’ উদ্ধার করা হয়েছে।

অন্যদিকে, শুক্রবার রাতে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) সংলগ্ন সুন্দরবানি জেলায় আরেকটি ঘটনায় এক সেনা সদস্য নিহত হন। হোয়াইট নাইট কর্পস এক্সে জানায়, সেনারা সেখানে একটি ‘অনুপ্রবেশের চেষ্টা’ ব্যর্থ করে দিয়েছে।

উল্লেখ্য, কাশ্মীর একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর থেকে এটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিভক্ত।

উভয় দেশই অঞ্চলটির ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দাবি করে, তবে তারা কেবল কিছু অংশ শাসন করে। ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের পর থেকে, ভারত এই অঞ্চলে প্রায় ৫ লক্ষ সেনা মোতায়েন করেছে।

জম্মু ও কাশ্মীর, যা নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিবাদ দীর্ঘদিনের, সেখানে বিদ্রোহীরা কাশ্মীরকে হয় স্বাধীন করতে চায়, নয়তো পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করতে চায়।

বিদ্রোহীদের সঙ্গে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর লড়াইয়ে বহু কাশ্মীরি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদনে কাশ্মীরে ভারতের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছিল এবং এসব অভিযোগের তদন্তের আহ্বান জানায়।

এর আগে, জাতিসংঘের তৎকালীন মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান জেইদ রা’আদ আল হোসেন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিলেন।

গত মাসেও, এই অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে চার পুলিশ সদস্য এবং দুই সন্দেহভাজন বিদ্রোহী নিহত হয়।

২০১৯ সালে নরেন্দ্র মোদি সরকার রাজ্যের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করার পর থেকেই এই অঞ্চলে ক্ষোভ বাড়ছে।

সেই সময় ভিন্নমত, নাগরিক স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, এবং সামরিক অভিযান জোরদার করা হয়।

গত বছর, একাধিক প্রাণঘাতী বিদ্রোহী হামলার পর, যেখানে ৫০ জনের বেশি সেনা নিহত হয়েছিল, দক্ষিণ পার্বত্য অঞ্চলে হাজার হাজার অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়।

ভারত প্রায়ই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এলওসি পেরিয়ে বিদ্রোহীদের ভারতীয় বাহিনীর ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ করে।

যদিও পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করে এবং বলে যে তারা কেবল কাশ্মীরের স্ব-নিয়ন্ত্রণ অধিকারের প্রতি সমর্থন জানায়।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *