গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন: উদ্বাস্তু মানুষের আহাজারি!

গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান: উদ্বাস্তু জীবনের কঠিন বাস্তবতা।

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাদের অভিযান আরও জোরদার করায় সেখানকার বেসামরিক নাগরিকদের জীবনযাত্রা চরম দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। একদিকে যেমন চলছে ব্যাপক বোমা হামলা, তেমনই অন্যদিকে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যাও ক্রমাগত বাড়ছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন সপ্তাহে প্রায় ৪ লক্ষ মানুষকে ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। ইসরায়েল হামাসকে তাদের জিম্মিদের মুক্তি দিতে চাপ প্রয়োগের উদ্দেশ্যে এই অভিযান চালাচ্ছে।

মার্চ মাসের ১৮ তারিখ থেকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজার বিভিন্ন অংশে, এমনকি রাফাতেও, বাসিন্দাদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। এর ফলে গাজার বিশাল এলাকা এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

উদ্বাস্তুরা উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছেন, যেখানে স্থান সংকুলান, খাবার ও পানির অভাব দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, সেখানকার পরিস্থিতি মানবিক বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে।

গাজা শহরের রাস্তাগুলোতে উদ্বাস্তুদের ভীড় দেখা যাচ্ছে, যাদের অধিকাংশই খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকেরই অভিযোগ, আশ্রয়শিবিরগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি ও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে।

ময়লা-আবর্জনা এবং পোকামাকড়ের উপদ্রব সেখানকার জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তুলেছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ-এর ভাষ্যমতে, গাজার অনেক এলাকাকে ‘নিরাপত্তা অঞ্চলে’ পরিণত করা হচ্ছে, যার ফলে এই অঞ্চলের আয়তন ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে।

এমনকি, গাজাকে বিভিন্ন অংশে বিভক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের। তবে ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য এখনো স্পষ্ট নয়।

এদিকে, হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অভিযান অব্যাহত থাকলেও তারা এখনও প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। গত কয়েক মাসে রাফা সহ গাজার বিভিন্ন এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের লক্ষ্য করে রকেট হামলা হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের হিসাব অনুযায়ী, ১৮ মার্চের পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় আবাসিক ভবন এবং উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষের উপর অন্তত ২২৪টি আঘাত হেনেছে। এসব হামলায় নারী ও শিশুর হতাহতের সংখ্যা উদ্বেগজনক।

গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানো কঠিন হয়ে পড়েছে। সেখানকার হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় ঔষধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

জাতিসংঘের খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে, জরুরি ঔষধের ৩৭ শতাংশ এবং ক্যান্সারের ঔষধ ৫০ শতাংশের বেশি এখন মজুত নেই।

বাস্তুচ্যুত হওয়া ফয়সাল জামাল ফয়সাল বলেন, “আমরা জানি না কোথায় যাচ্ছি, তবে আমাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই।” তিনি আরও যোগ করেন, “শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না, খেলাধুলা করতে পারছে না।

তাদের শৈশব বলতে কিছু নেই।”

অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজার বাসিন্দারা চাইলে যেকোনো স্থানে যেতে পারে। তবে উদ্বাস্তুদের জন্য পর্যাপ্ত আশ্রয় এবং সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়নি।

এই পরিস্থিতিতে, গাজার বাসিন্দারা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তাদের অনেকেই জানেন না, তাদের ভবিষ্যৎ কী।

বয়স্ক আবু মোহাম্মদ যিনি চোখের সমস্যা ও ডায়াবেটিসে ভুগছেন, বলেন, “হয়তো এই নিয়ে আমরা ২০ বার বাস্তুচ্যুত হলাম। জীবনটা যেন অর্থহীন হয়ে গেছে।”

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *