যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি, বিশেষ করে কানাডার ওপর আরোপিত শুল্ক, কিভাবে আমেরিকার একটি বিশেষ শিল্পকে প্রভাবিত করছে, সেই গল্প নিয়ে আসা যাক। ঘটনাটি হলো, এখানকার ম্যাপেল সিরাপ উৎপাদনকারীরা এক জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে কানাডার থেকে আসা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল—আমেরিকান পণ্যকে উৎসাহিত করা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এর ফল উল্টো হতে পারে।
নিউ ইয়র্কের সালমে অবস্থিত ‘ড্রাই ব্রুক সুগার হাউস’-এর কেভিন কেইস এবং তাঁর শ্বশুরমশাই বব চেম্বার্সের ব্যবসার কথা ভাবুন। তাঁরা প্রায় ৩০ বছর ধরে ম্যাপেল সিরাপ তৈরি করছেন।
তাঁদের এলাকার ম্যাপেল বন থেকে রস সংগ্রহ করে সিরাপ বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব সরঞ্জামই আসে কানাডা থেকে। যেমন—গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য ভ্যাকুয়াম ব্যবস্থা থেকে শুরু করে জল সরানোর মেশিন—সবকিছুই কানাডা থেকে আমদানি করতে হয়।
এখন, যেহেতু কানাডার ওপর শুল্কের বোঝা চাপানো হয়েছে, তাই এই সরঞ্জামগুলোর দাম বেড়ে যাবে। ফলে, সিরাপ তৈরির খরচও বাড়বে।
এমনকি, যারা নতুন করে এই ব্যবসা শুরু করতে চাইছে, তাদের জন্যেও পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়বে।
কর্নেল ইউনিভার্সিটির ‘ইউহলেইন ম্যাপেল রিসার্চ ফরেস্ট’-এর পরিচালক অ্যাডাম ওয়াইল্ডের মতে, উৎপাদনকারীরা সাধারণত সামান্য লাভেই ব্যবসা করেন। তাই এই ২৫ শতাংশ শুল্কের কারণে ভোক্তাদের বেশি দামে ম্যাপেল সিরাপ কিনতে হতে পারে।
আর এই খরচ সামাল দিতে গিয়ে ছোট ছোট পারিবারিক ব্যবসাগুলো ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
অন্যদিকে, ডেভিড ক্যাম্পবেল নামের আরেকজন ম্যাপেল চাষি আছেন। তিনি জানান, ভোক্তাদের কাছ থেকে বেশি দাম নেওয়াটা কঠিন, কারণ তাঁরা চান ন্যায্য মূল্যে পণ্য সরবরাহ করতে।
তাঁর মতে, উৎপাদন খরচ বাড়লে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় অনেক সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক শুল্কের ঘোষণার আগেই কানাডা থেকে সিরাপ তৈরির সরঞ্জাম বেশি দামে কিনে মজুদ করতে শুরু করে। কারণ, শুল্ক কার্যকর হলে তাদের খরচ আরও বাড়ত।
এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমেরিকার ম্যাপেল সিরাপের বাজারের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই কানাডার হাতে। কানাডা প্রতি বছর তাদের উৎপাদিত ম্যাপেল সিরাপের প্রায় ৬০ শতাংশ আমেরিকায় রপ্তানি করে।
কুইবেকের ‘ম্যাপেল সিরাপ উৎপাদক সংস্থা’ (Quebec Maple Syrup Producers) নামের একটি সরকারি সংস্থা তাদের মজুত ভাণ্ডার ব্যবহার করে সিরাপের দাম ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
এই অবস্থায়, ইন্টারন্যাশনাল ম্যাপেল সিরাপ ইনস্টিটিউট যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের কাছে শুল্ক আরোপ না করার জন্য আবেদন জানিয়েছিল। তাদের আশঙ্কা ছিল, শুল্ক আরোপ করা হলে তা আমেরিকান ম্যাপেল সিরাপ উৎপাদনকারীদের ক্ষতি করবে এবং ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে।
তবে, বাণিজ্য বিভাগ তাদের উদ্বেগের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
সব মিলিয়ে, এই শুল্ক নীতির কারণে আমেরিকান ম্যাপেল সিরাপ উৎপাদনকারীরা এক অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তাঁরা এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।
এই ঘটনা থেকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিতে পারেন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতি কীভাবে একটি দেশের স্থানীয় শিল্পকে প্রভাবিত করতে পারে, তার একটি উদাহরণ হলো এই ম্যাপেল সিরাপের গল্প।
আমাদের দেশেও এমন অনেক শিল্প আছে, যেগুলো আমদানি করা কাঁচামাল বা সরঞ্জামের ওপর নির্ভরশীল। তাই, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের যেকোনো পরিবর্তন আমাদের ব্যবসার ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে, সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন