ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির জেরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তাদের মধ্যে বাড়ছে উদ্বেগ, যার প্রভাব পড়ছে তাদের কেনাকাটার ধরনে। সম্প্রতি *The Guardian*-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ঘোষণার পর থেকে অনেক আমেরিকান তাদের ব্যয়ের পরিকল্পনা নতুন করে সাজাচ্ছেন। কেউ কেউ জিনিসপত্র মজুদ করছেন, কেউ আবার বড় ধরনের কেনাকাটাগুলো হয় এগিয়ে আনছেন, নয়তো স্থগিত করছেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দক্ষিণ ক্যারোলিনার ৭৩ বছর বয়সী ডেন সম্প্রতি টিস্যু, টয়লেট পেপার, এবং পোষা কুকুরের জন্য প্যাড কিনেছেন। তার মতে, ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার আশঙ্কায় তিনি এমনটা করেছেন।
ডেনের এই পদক্ষেপ যেন কোভিড মহামারীর শুরুর দিকের কথা মনে করিয়ে দেয়, যখন মাস্ক, গ্লাভস ও টয়লেট পেপার কেনার জন্য সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল।
টেক্সাসের ৬১ বছর বয়সী অধ্যাপক হিদার জানান, তিনি এবং তার স্বামী খাদ্যপণ্যের দামের পরিবর্তন সামলাতে পারলেও, গাড়ির দাম বাড়ার আশঙ্কায় তারা নতুন একটি গাড়ি কিনেছেন। তাদের ১৪ বছর পুরোনো একটি গ্যাস-চালিত মিনি কুপার ছিল, যা তারা একটি হাইব্রিড গাড়ির সঙ্গে বদল করার পরিকল্পনা করেছিলেন।
অন্যদিকে, নেভাদার ৫৬ বছর বয়সী স্টেফানি নামের একজন শিক্ষক ও প্রযুক্তি কর্মী পুরনো জীপের বদলে একটি টয়োটা টাকোমা কিনেছেন। এছাড়াও, তিনি কিছু বিনিয়োগ নগদ অর্থে পরিবর্তন করেছেন।
ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তিনি শুল্কের প্রভাব থেকে বাঁচতে কৌশল তৈরি করতে শুরু করেন। স্টেফানির মতে, “প্রথম প্রশাসনের সময় আমি একটি বিষয় শিখেছি, আর সেটি হলো তার (ট্রাম্পের) কথা বিশ্বাস করতে হবে। তিনি অদ্ভুত কথা বলেন, এবং সেই অনুযায়ী কাজও করেন।”
এই পরিস্থিতিতে অনেকে তাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দিচ্ছেন এবং সঞ্চয়ের ওপর জোর দিচ্ছেন। কেউ কেউ তাদের ভবিষ্যৎ ভ্রমণের পরিকল্পনা বাতিল করছেন।
কেউ আবার চাল, তেল, ভিনেগার ও আটা-ময়দার মতো প্রয়োজনীয় জিনিস মজুদ করছেন।
তবে, এই শুল্ক নীতির কারণে অনেকের ব্যক্তিগত সঞ্চয়েও প্রভাব পড়েছে। নিউ জার্সির ৭০ বছর বয়সী জোনাথন জানান, ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে তার ব্যক্তিগত অবসরকালীন হিসাব (আইআরএ) প্রথমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। যদিও পরে তা সামান্য বেড়েছে।
তিনি তার বাড়ির কার্পেট পরিবর্তন এবং দুটি পুরোনো টেলিভিশন বদলানোর পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। জোনাথনের মতে, “আমরা শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় জিনিস কিনব এবং বিল পরিশোধ করব, যতক্ষণ না এই নির্বুদ্ধিতা শেষ হয়।”
এই পরিস্থিতিতে অনেক আমেরিকান মনে করছেন, তাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা দরকার। কেউ কেউ পুরনো ফোন ও কম্পিউটার ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যাতে নতুন করে ইলেকট্রনিক গ্যাজেট কিনতে না হয়। তারা স্থানীয় দোকান থেকে জিনিস কেনার দিকে ঝুঁকছেন, কারণ তাদের মতে, এটি হলেও ট্রাম্পের নীতির সঙ্গে জড়িত কোম্পানিগুলোর থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
প্রতিবেদনে ছোট ব্যবসার মালিক ক্রিস্টিনের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি তার মায়ামির ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দুই বছরের জন্য আগেই কিনে রেখেছেন। তিনি তার ছেলের জন্মদিনের উপহারও (একটি বাইসাইকেল) আগেভাগেই কিনেছিলেন।
তবে, তিনি তার ব্যবসার চাহিদাও কমতে দেখছেন।
এই পরিস্থিতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের মধ্যে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে, যা তাদের কেনাকাটার ধরনে পরিবর্তন আনতে বাধ্য করছে।
তথ্য সূত্র: The Guardian