গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান জোরদার হওয়ার মধ্যে একটি হাসপাতালে বোমা হামলার খবর পাওয়া গেছে। রবিবার ভোরে গাজা শহরের আল-আহলি হাসপাতালে (Al-Ahli Hospital) বিমান হামলা চালানো হয়, এমনটাই জানিয়েছে সেখানকার স্থানীয় সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি।
তবে, এই হামলায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এই ঘটনার তদন্ত করছে বলে জানা গেছে।
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি সামরিক অভিযান আরও তীব্র হচ্ছে। গাজার দক্ষিণাঞ্চলে একটি করিডোর তৈরি করা হয়েছে এবং ইসরায়েল তাদের সামরিক অভিযান আরও বিস্তৃত করার পরিকল্পনা করছে।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানিয়েছে, মধ্যরাতের পর ইসরায়েলি বিমান বাহিনী আল-আহলি হাসপাতালের একটি ভবনকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এই হাসপাতালটি ‘বাপ্তিস্ট হাসপাতাল’ বা ‘আহলি আরব হাসপাতাল’ নামেও পরিচিত।
সিভিল ডিফেন্স এজেন্সির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, ওই এলাকার রোগীদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হুঁশিয়ারির কয়েক মিনিট পরেই এই হামলা চালানো হয়। হামলায় হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কেন্দ্র এবং নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের (ICU) অক্সিজেন সরবরাহ কেন্দ্রটি ধ্বংস হয়ে গেছে।
এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু (Benjamin Netanyahu) বলেছেন, তারা গাজাকে বিভক্ত করার পরিকল্পনা করছেন।
আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুযায়ী হাসপাতালগুলো সুরক্ষিত থাকার কথা। কিন্তু গত ৭ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় হাসপাতালগুলোতে বারবার ইসরায়েলি হামলা হয়েছে।
শনিবার ইসরায়েল ঘোষণা করেছে, তারা রাফা শহরকে গাজার বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটি নতুন নিরাপত্তা করিডোর তৈরি করেছে। একইসঙ্গে, তারা খুব শীঘ্রই উপকূলীয় অঞ্চলের অন্যান্য অংশেও অভিযান প্রসারিত করবে বলে জানিয়েছে।
এর ফলে ফিলিস্তিনিরা আরও ছোট হয়ে আসা ভূমিতে আটকা পড়ছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই গাজার অন্যান্য অঞ্চলে অভিযান আরও জোরদার করা হবে। ফিলিস্তিনিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, হামাসকে সরিয়ে দিতে এবং জিম্মিদের মুক্তি দিতে হবে।
গত সপ্তাহে, ইসরায়েলি সেনারা ‘মোরাগ’ নামে পরিচিত একটি নতুন নিরাপত্তা করিডোরে প্রবেশ করে। এটি রাফা এবং খান ইউনিসের মধ্যে অবস্থিত একটি ইহুদি বসতির নাম।
এর আগে, সেনাবাহিনী রাফার অধিকাংশ এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয়। রাফা পৌরসভার পক্ষ থেকে ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা হামাসকে জিম্মিদের মুক্তি দিতে এবং নতুন যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনে নিতে চাপ প্রয়োগ করতে গাজার বড় অংশ দখলের পরিকল্পনা করছে।
ইসরায়েলি সরকার খাদ্য, জ্বালানি এবং মানবিক সহায়তা সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে, যার ফলে গাজার প্রায় ২০ লক্ষ ফিলিস্তিনি তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছেন।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এটি একটি যুদ্ধাপরাধ।
ইসরায়েল দাবি করেছে, গত দুই মাসের যুদ্ধবিরতির সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ সরবরাহ করা হয়েছিল। তবে, ত্রাণ সংস্থাগুলো এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে।
নেতানিয়াহু বলেছেন, মোরাগ হবে ‘দ্বিতীয় ফিলাডেলফি করিডোর’। উল্লেখ্য, ফিলাডেলফি করিডোরটি মিশরের সঙ্গে গাজার সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত, যা মে ২০২৪ সাল থেকে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এছাড়াও, ইসরায়েল গাজার উত্তরাংশকে বাকি অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করে নেটজারিমা করিডোরটির (Netzarim corridor) নিয়ন্ত্রণও পুনরুদ্ধার করেছে।
গাজায় ইসরায়েলের তৈরি করা করিডোর এবং বাফার জোনের কারণে বর্তমানে দেশটির অর্ধেকের বেশি অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে চলে গেছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, যারা স্বেচ্ছায় অন্য দেশে যেতে চান, তাদের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) একটি প্রস্তাব রয়েছে।
তবে ফিলিস্তিনিরা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তাদের জন্মভূমিতে থাকার দৃঢ় সংকল্প প্রকাশ করেছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এই ধরনের পরিকল্পনা ‘জাতিগত নির্মূলের’ শামিল, যা একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের বেসামরিক নাগরিকদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের সামিল।
৭ অক্টোবরের হামলায় প্রায় ১,২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই ছিলেন বেসামরিক নাগরিক।
এরপর থেকে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে ৫০,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান