সিরিয়ার বিষয়ে এরদোগানের বিস্ফোরক মন্তব্য, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান সিরিয়ায় ইসরায়েলের স্থিতিশীলতা বিনষ্টের তীব্র নিন্দা করেছেন। তুরস্কের আন্তালিয়াতে অনুষ্ঠিত এক কূটনৈতিক ফোরামে তিনি এই মন্তব্য করেন।

সিরিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্রটিতে ইসরায়েলের পদক্ষেপের কারণে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এর কয়েক দিন আগে, সিরিয়ার মাটিতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে আলোচনার আয়োজন করা হয়েছিল।

ফোরামে এরদোগান বলেন, “সিরিয়াকে নতুন করে অস্থিতিশীলতার দিকে যেতে দেবে না তুরস্ক।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা এই অঞ্চলের প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে, বিশেষ করে ট্রাম্প এবং পুতিনের সঙ্গে সিরিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং স্থিতিশীলতা রক্ষার বিষয়ে ঘনিষ্ঠ আলোচনা করছি।”

আন্তালিয়া সম্মেলনে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এবং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাও উপস্থিত ছিলেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান, শারা-র সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে জানানো হয়, এরদোগান সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য তুরস্কের প্রচেষ্টার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তুরস্ক চায়, সিরিয়ায় যেন পুনরায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়।

আসাদের ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকেই তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। গত মাসে ইসরায়েলি বাহিনী সিরিয়ার তিনটি সামরিক ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায়।

এরপর পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যায়। রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, তুরস্কের সামরিক দলগুলো হামা প্রদেশের প্রধান বিমানবন্দর এবং হোমসের টি৪ ও পালমিরা বিমানঘাঁটির রানওয়ে, হ্যাঙ্গার এবং অবকাঠামো পরীক্ষা করে দেখেছে। তারা জানতে চায়, আঙ্কারা ও দামেস্কের মধ্যে একটি যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তির অংশ হিসেবে সেখানে সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন করা যায় কিনা।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাটজ বিমান হামলাকে “ভবিষ্যতের জন্য একটি সুস্পষ্ট বার্তা ও সতর্কতা” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আসাদ ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকে ইসরায়েল সিরিয়ার সামরিক অবস্থানে কয়েকশ বার আঘাত হেনেছে।

এর ফলে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে, যা দামেস্কের অন্তর্বর্তী সরকার উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়ার আশা করেছিল।

আসাদের ক্ষমতাচ্যুতির ফলে তার পরিবারের অর্ধশতকের বেশি শাসনের অবসান হয়। সেইসঙ্গে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধও বন্ধ হয়ে যায়।

এই যুদ্ধে তুরস্ক, রাশিয়া ও ইরানের মতো দেশগুলো বিভিন্ন পক্ষকে সমর্থন জুগিয়েছে।

দামেস্কে শারা-র নেতৃত্বাধীন বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর, তুরস্ক সিরিয়ার নতুন সরকারের প্রধান সমর্থকে পরিণত হয়। তুরস্কের কর্মকর্তারা দামেস্কের সঙ্গে দ্রুত সম্পর্ক স্থাপন করেছেন।

তারা একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছেন, যার মাধ্যমে তুরস্ক সিরিয়ার আকাশসীমা ব্যবহার করতে এবং সেখানে ঘাঁটি স্থাপন করতে পারবে। অন্যদিকে, ইসরায়েল গোলান মালভূমির ওপর তাদের কয়েক দশকের পুরনো দখলদারিত্ব আরও বাড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, তুরস্ক যদি সিরিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন করে বা যুদ্ধবিমান পাঠায়, তাহলে ইসরায়েলের স্বাধীনতা সীমিত হয়ে যাবে।

সম্প্রতি, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দামেস্কের দক্ষিণে দারার একটি গ্রামে প্রবেশ করে। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, ওই সময় গোলাবর্ষণে ৯ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়।

সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনীর উপস্থিতি এখনো বিদ্যমান। এর মধ্যেই একটি ইসরায়েলি ট্যুর কোম্পানি মাউন্ট হারমনের আশেপাশে প্রতিদিন দুটি করে ভ্রমণের প্রস্তাব দেওয়া শুরু করেছে।

সিরিয়ার তিনটি বিমানঘাঁটিতে ইসরায়েলের হামলার এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে, দুই পক্ষ— তুরস্ক ও ইসরায়েল—আজারবাইজানে বৈঠক করে। বৈঠকে সিরিয়ায় ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা প্রশমনের উপায় নিয়ে আলোচনা হয়।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, দুই পক্ষ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আলোচনার ধারা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছে।

তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান স্থানীয় একটি টেলিভিশনকে জানান, সিরিয়ায় কিছু সামরিক অভিযান চালানোর সময় ইসরায়েলের সঙ্গে একটি সমঝোতা প্রয়োজন, কারণ ইসরায়েল ওই অঞ্চলে বিমান চালায়।

ফিদান আরও জানান, উভয় পক্ষের কারিগরি দলগুলো প্রয়োজনে যোগাযোগ রাখে, যাতে সামরিক বাহিনীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি এড়ানো যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিরিয়ায় দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষের ঝুঁকি রয়েছে। তাই, এই ধরনের আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *