একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা: প্রথমবার একা ভ্রমণে বের হওয়া মহিলাদের জন্য জরুরি ১৫টি জিনিস।
বর্তমান সময়ে একাকী ভ্রমণের প্রবণতা বাড়ছে, বিশেষ করে বাংলাদেশের তরুণীদের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা চোখে পড়ার মতো। নতুন জায়গা ঘুরে দেখা, নিজের মতো করে সময় কাটানো, আত্মনির্ভরশীল হওয়া—এসব কারণে একাকী ভ্রমণের আকর্ষণ বাড়ছে।
তবে, একা ভ্রমণে কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি, যাতে ভ্রমণটি নিরাপদ ও আনন্দদায়ক হয়। যারা প্রথমবার একা ভ্রমণে যাচ্ছেন, তাদের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
- সঠিক আকারের ব্যাগ:
ভ্রমণে আপনার জিনিসপত্র বহনের জন্য একটি উপযুক্ত ব্যাগ নির্বাচন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। হালকা ও বহনযোগ্য একটি ব্যাকপ্যাক অথবা চাকাযুক্ত নরম-প্যাডেড স্যুটকেস বেছে নিতে পারেন। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ভালো মানের ব্যাগ পাওয়া যায়।
এক্ষেত্রে, ওসপ্রে (Osprey) অথবা কেলপ্যাকের (Calpak) মত ব্র্যান্ডের ব্যাগ দেখতে পারেন।
- ছোট ব্যাগ:
ব্যাগ ছাড়াও, ভ্রমণের সময় প্রয়োজনীয় জিনিস, যেমন—মোবাইল, মানিব্যাগ, পাসপোর্ট, পাওয়ার ব্যাংক—রাখার জন্য একটি ছোট ব্যাগ সঙ্গে রাখা ভালো। কাঁধের ব্যাগ (crossbody bag) অথবা কোমরের ব্যাগ (belt bag) ব্যবহার করতে পারেন।
এই ধরনের ব্যাগগুলো শরীরের সাথে লেগে থাকে, যা ছিনতাইকারীদের থেকে আপনার জিনিসপত্র সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। লুলু লেমনের (Lululemon) মত ব্র্যান্ডের ব্যাগগুলো দেখতে পারেন।
- পাওয়ার ব্যাংক:
একাকী ভ্রমণে আপনার ফোন সবসময় সচল রাখা জরুরি। ছবি তোলা, লোকেশন দেখা, জরুরি যোগাযোগ—এসব ক্ষেত্রে ফোনের চার্জ দ্রুত ফুরিয়ে যেতে পারে। তাই একটি পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখুন।
চার্মকাস্টের (Charmcast) মত ব্র্যান্ডের পাওয়ার ব্যাংকগুলোতে কেবল যুক্ত থাকে, যা আলাদা করে আর তার (cable) বহন করার ঝামেলা থেকে মুক্তি দেয়।
- আরামদায়ক জুতো:
ভ্রমণে হাঁটাচলার সুবিধার জন্য আরামদায়ক জুতো অপরিহার্য। সারাদিন ঘুরে বেড়ানোর সময় পায়ের আরামের দিকে খেয়াল রাখা দরকার।
রিবক ক্লাব সি (Reebok Club C) অথবা অলবার্ডস ট্রি ফ্লাইয়ারের (Allbirds Tree Flyer) মত ভালো মানের এবং আরামদায়ক জুতো নিতে পারেন।
- ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম:
নিজের সুরক্ষার জন্য কিছু নিরাপত্তা সরঞ্জাম সঙ্গে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। জরুরি অবস্থার জন্য একটি ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এলার্ম (personal safety alarm) সাথে রাখতে পারেন।
এছাড়া, হোটেলের দরজার জন্য একটি অ্যালার্ম ব্যবহার করতে পারেন, যা আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। সেফটির জন্য সে’স বার্ডি (She’s Birdie) অথবা সাবরের (Sabre) মত ব্র্যান্ডের নিরাপত্তা এলার্ম দেখতে পারেন।
- দ্রুত শুকনো হওয়া তোয়ালে:
হোস্টেলে থাকার সময় বা সমুদ্র বা সুইমিং পুলে গোসলের পর দ্রুত শুকনো হওয়া তোয়ালে খুবই কাজে আসে। নমাডিক্সের (Nomadix) মত হালকা ও সহজে বহনযোগ্য তোয়ালে এক্ষেত্রে আদর্শ।
- বডি ওয়াশ:
ভ্রমণে সব সময় গোসল করার সুযোগ নাও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে বডি ওয়াশ বা বডি ওয়াইপস (body wipes) আপনাকে সতেজ রাখতে সাহায্য করবে।
- ভাঁজ করা যায় এমন পানির বোতল:
ভ্রমণে শরীরকে সতেজ রাখতে পর্যাপ্ত জল পান করা জরুরি। তাই একটি ভাঁজ করা যায় এমন পানির বোতল সঙ্গে রাখুন।
এটি সহজে ব্যাগে রাখা যায় এবং খালি হয়ে গেলে ভাঁজ করে ছোট করে নেওয়া যায়। প্লাটিপাস সফটবোটল (Platypus SoftBottle) অথবা নাথান সফট ফ্লেক্সের (Nathan Soft Flex) মত বোতল দেখতে পারেন।
- মাল্টি-ফাংশনাল পোশাক:
ভ্রমণে জায়গা বাঁচানোর জন্য মাল্টি-ফাংশনাল পোশাক খুবই উপযোগী। এমন পোশাক নিন যা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরা যেতে পারে। একটি সাধারণ পোশাক, যা সহজেই অন্য পোশাকের সাথে মানানসই, এক্ষেত্রে সেরা।
- বোতামওয়ালা শার্ট:
একটি ক্লাসিক বোতামওয়ালা শার্ট আপনার ভ্রমণের সঙ্গী হতে পারে। এটি জিন্স, স্কার্ট অথবা অন্য কোনো পোশাকের সাথে পরতে পারেন। এমনকি সমুদ্রের তীরে এটি পরলে দারুণ দেখায়।
এভারলেন (Everlane) অথবা আরিতজিয়ার (Aritizia) মত ব্র্যান্ডের শার্ট দেখতে পারেন।
- হেডফোন:
দীর্ঘ ভ্রমণকালে গান শোনা, সিনেমা দেখা অথবা বাইরের কোলাহল থেকে দূরে থাকতে হেডফোন খুবই প্রয়োজনীয়। বোস আল্ট্রা ওপেন ব্লুটুথ ইয়ারবাডসের (Bose Ultra Open Bluetooth Earbuds) মত ভালো মানের হেডফোন নিতে পারেন।
- সাঁতারের পোশাক:
যদি কোনো সুইমিং পুলে সাঁতার কাটার বা সমুদ্রের ধারে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকে, তাহলে একটি সাঁতারের পোশাক সঙ্গে রাখা ভালো। এলস্পেসের (LSpace) মত ভালো ব্র্যান্ডের পোশাক দেখতে পারেন।
- সাধারণ গয়না:
ভ্রমণে বেশি গয়না না নেওয়াই ভালো। সাধারণ কিছু গয়না, যেমন—ছোট কানের দুল বা একটি সাধারণ নেকলেস—সঙ্গে রাখতে পারেন।
- ভ্রমণের জার্নাল:
ভ্রমণের স্মৃতিগুলো লিখে রাখার জন্য একটি জার্নাল সাথে নিন। এতে ভ্রমণের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো টুকে রাখতে পারেন, যা পরবর্তীতে আপনার ভ্রমণের স্মৃতিচারণে সাহায্য করবে।
- সুরক্ষা বিষয়ক সতর্কতা:
ভ্রমণে বের হওয়ার আগে গন্তব্য সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন। সেখানকার সংস্কৃতি, স্থানীয় নিয়মকানুন সম্পর্কে ধারণা রাখুন। একা ভ্রমণে অপরিচিত মানুষের সঙ্গে বেশি মিশতে যাবেন না।
নিজের জিনিসপত্রের দিকে খেয়াল রাখুন এবং রাতে একা ঘোরাঘুরি করা এড়িয়ে চলুন।
এসব প্রস্তুতি আপনার প্রথম একক ভ্রমণকে আরও নিরাপদ, আনন্দদায়ক এবং স্মরণীয় করে তুলবে।
তথ্যসূত্র: ট্র্যাভেল অ্যান্ড লেজার