৬০ ছুঁই ছুঁই, বাবার ভালোবাসার কাঙাল আজও!

বাবা: একজন মানুষের জীবনে, বিশেষ করে ছেলেদের জীবনে, বাবার ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। বাবার আদর, স্নেহ, শাসনের ছায়ায় একজন ছেলে বেড়ে ওঠে।

কিন্তু যদি কোনো ছেলের জীবনে বাবার অভাব অনুভব হয়, তবে সেই কষ্ট ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। সম্প্রতি এমন একটি ঘটনার কথা জানা গেছে, যেখানে প্রায় ষাটের কাছাকাছি বয়সের একজন ব্যক্তি এখনো তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া অবহেলার যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন।

ছেলেটির ভাষায়, তাঁর বাবা সবসময় নিজের জ্ঞান নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তিনি সবসময় নিজেকে জাহির করেন এবং অন্যদের ভুল প্রমাণ করতে চান।

ছেলেটির পেশা একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী, যা তাঁর বাবার কাছে তেমন গুরুত্ব পায় না। বাবা চান ছেলে আরও জ্ঞানী হোক, আরও প্রতিষ্ঠিত হোক।

ছেলের জীবনে ঘটে যাওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় বাবার কোনো আগ্রহ ছিল না, এমনকি নাতি-নাতনীদের প্রতিও তিনি ছিলেন উদাসীন।

ছেলেটির মা সবসময় বলেন, তাঁর স্বামী আসলে ভালো মানুষ, তবে কিছুটা গম্ভীর এবং মিশুকে নন। কিন্তু ছেলেটির মনে হয়, তাঁর বাবা কোনোদিনই বদলাবেন না।

তিনি চান, তাঁর বাবা অন্তত তাঁর প্রতি সহানুভূতি দেখান, তাঁর জীবনের ভালো-মন্দ বুঝবার চেষ্টা করুন। কিন্তু বাবার কাছ থেকে তিনি তেমন কিছুই পাননি।

এই বিষয়ে মনোবিদদের মতে, বাবা-মায়ের কাছ থেকে স্বীকৃতি পাওয়াটা মানুষের জন্মগত একটি আকাঙ্ক্ষা। ছোটবেলায় আমরা বাবা-মাকে ঈশ্বরের মতো দেখি।

তাঁরা আমাদের নিরাপত্তা, ভালোবাসা আর মূল্যায়নের উৎস। তাঁরা আমাদের কেমন চোখে দেখেন, আমাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেন, তা আমাদের আত্ম-মর্যাদাবোধ তৈরি করে।

কিন্তু অনেক সময় বাবা-মায়েরা তাঁদের এই বিশাল ক্ষমতার কথা বুঝতে পারেন না। তাঁরা হয়তো বুঝতে পারেন না, তাঁদের ছোটবেলার আচরণ কীভাবে বড় হয়েও আমাদের প্রভাবিত করে।

এই ধরনের পরিস্থিতিতে বাইরের লোকেরা হয়তো বলতে পারেন, যখন অন্যজন কোনো সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী নন, তখন সেই সম্পর্কের পেছনে ছোটা কেন? কিন্তু আমাদের অনেকের কাছেই বাবা-মায়ের স্বীকৃতি পাওয়াটা নিজেদের মূল্যবান মনে করার সঙ্গে জড়িত।

যখন কোনো বাবা-মা মানসিক সমর্থন দেন না, তখন তা শুধু প্রত্যাখ্যানের মতো নয়, বরং আমাদের অস্তিত্বের উপর একটি প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করে।

এই ব্যক্তি সম্ভবত তাঁর বাবার কাছ থেকে সেই ভালোবাসা ও মনোযোগ পাননি, যা তিনি পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। তাই তিনি এখনো সেই শূন্যতা অনুভব করেন।

মনোবিদরা মনে করেন, এই কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় হলো নিজের আত্ম-মর্যাদাবোধ তৈরি করা। বাবার কাছ থেকে পাওয়া না পাওয়া নিয়ে দুঃখ না করে, নিজের ভালো লাগা এবং আত্ম-উন্নতির দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

নিজের প্রয়োজনগুলো পূরণ করার জন্য অন্য উপায় খুঁজে বের করতে হবে।

অতএব, নিজের ভেতরের সেই শিশুকে ভালোবাসুন, যিনি বাবার কাছ থেকে স্বীকৃতি চেয়ে আজও অপেক্ষা করছেন। নিজেকে ভালোবাসুন, নিজের যত্ন নিন, এবং নিজের ভালো লাগার জগৎ তৈরি করুন।

বাবা হয়তো তাঁর ভুল বুঝতে পারবেন না, কিন্তু আপনি অবশ্যই পারবেন নিজের জীবনের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *