পনির থেকে স্যামন: খাবারের জগতে অভিনব চুরির কারণ?

বিলাসবহুল খাদ্য সামগ্রী চুরি: ইউরোপে বেড়ে চলা অপরাধ, বাংলাদেশের জন্য সতর্কবার্তা?

ইউরোপে বর্তমানে একটি নতুন ধরনের অপরাধের প্রবণতা বাড়ছে, যেখানে দুষ্কৃতিকারীরা নামী-দামী খাদ্যদ্রব্য টার্গেট করছে। শুনতে কল্পনাকাহিনীর মতো মনে হলেও, উন্নতমানের পনির, স্যামন মাছ সহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের এই চুরিগুলো ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তা এবং ব্যবসার স্বচ্ছতা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে, ক্রিস সোয়েলস নামের একজন প্রস্তুতকারক, যিনি স্মোকড স্যামন মাছ সরবরাহ করেন, প্রতারণার শিকার হন। ফরাসি একটি সুপার মার্কেটের ভুয়া প্রতিনিধির সাথে তার ব্যবসা করার কথা হয়। বিপুল পরিমাণ মাছ সরবরাহের চুক্তি হওয়ার পর, সময় মতো পেমেন্ট না পাওয়ায় তিনি সন্দেহ করেন এবং তদন্ত শুরু করেন। পরে জানা যায়, তিনি প্রায় ৩৭,০০০ পাউন্ড (বর্তমান বিনিময় হারে প্রায় ৫২ লক্ষ টাকার বেশি) ক্ষতির শিকার হয়েছেন।

একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাজ্যের একটি নামকরা চিজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, নেইলস ইয়ার্ড ডেইরিতেও। এখানেও প্রতারকরা একটি ভুয়া চুক্তির মাধ্যমে প্রায় ৩ লক্ষ পাউন্ড (বর্তমান বিনিময় হারে প্রায় ৪ কোটি ২৫ লক্ষ টাকার বেশি) মূল্যের ২২ টন চিজ হাতিয়ে নেয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিষয়টি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

শুধু যুক্তরাজ্যেই নয়, গ্রিস ও স্পেনের মতো দেশগুলোতেও এই ধরনের ঘটনা বাড়ছে। গ্রিসে ৫২ টন জলপাই তেল এবং স্পেনে প্রায় ২ লক্ষ ইউরোর (বর্তমান বিনিময় হারে প্রায় ২ কোটি ৩০ লক্ষ টাকার বেশি) ইবেরিকো হ্যাম চুরি হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক চাপ এই ধরনের অপরাধ বাড়াতে সহায়তা করছে। এছাড়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে আসা (Brexit) পরিস্থিতিও এক্ষেত্রে কিছু দুর্বলতা তৈরি করেছে।

ব্রিটিশ স্ট্যান্ডার্ডস ইনস্টিটিউটের মতে, খাদ্যপণ্য এখন বিশ্বব্যাপী চোরাচালানের ঝুঁকিতে থাকা একটি প্রধান পণ্য। খাদ্য বিষয়ক অপরাধের ঘটনাগুলো হালকাভাবে দেখা হয়, যা অপরাধীদের আরো উৎসাহিত করে। অনেক সময় দেখা যায়, এই ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা হয় এই ব্যবসার সাথে জড়িত, অথবা অন্য কোনো বড় অপরাধের সাথে তাদের যোগসাজশ থাকে।

তবে, উন্নতমানের খাদ্যপণ্যের উপর এমন আক্রমণের কারণ কি? মূলত, বাজারে এসব পণ্যের উচ্চ চাহিদা এবং এর থেকে দ্রুত লাভের সুযোগ থাকায় অপরাধীরা এই পথে ঝুঁকছে।

এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং খাদ্য ব্যবসায়ীদের আরো সচেতন হতে হবে। সরবরাহকারীদের যাচাই-বাছাই করা, গ্রাহকদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য রাখা এবং সন্দেহজনক লেনদেন সম্পর্কে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশেও সম্প্রতি খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, ইউরোপের এই ঘটনাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে, আমাদের খাদ্য ব্যবসায়ীদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত। ভেজাল ও চোরাচালান প্রতিরোধে সরকারের পাশাপাশি, ভোক্তাদেরও সচেতনতা বাড়াতে হবে। এছাড়াও, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে, ব্যবসায়িক নীতি-নৈতিকতা এবং কঠোর আইন প্রয়োগের বিকল্প নেই।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *