গাজায় হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলা: ধ্বংস জরুরি বিভাগ, বাড়ছে মৃতের সংখ্যা!

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আল-আহলি হাসপাতালে ধ্বংসযজ্ঞ, রোগী ও আহতদের চরম দুর্ভোগ।

গাজা শহরের একটি হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় জরুরি বিভাগ, মূল প্রবেশদ্বার এবং অক্সিজেনের সরবরাহ ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। গুরুতর আহত রোগীদের সরিয়ে নেওয়ার সময় রাস্তায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে একটি শিশুও ছিল।

খবর সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে চলা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের মধ্যে এই ঘটনা নতুন করে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রবিবার ভোরে হওয়া এই হামলায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে থাকা রোগীদের দ্রুত সরিয়ে নিতে হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আহত রোগীদের সরিয়ে নেওয়ার সময় চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসা সহায়তা দিতে না পারায় অনেকে মারা যায়।

আল-আহলি হাসপাতালটি উত্তর গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতালগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল এবং এখানে শত শত রোগীর চিকিৎসা চলছিল।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী গত কয়েক মাস ধরে গাজায় আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে, যার ফলস্বরূপ অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তারা জানিয়েছে, গত ১৮ই মার্চ থেকে ফিলিস্তিনের সঙ্গে হামাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১,৫৬০ জন নিহত হয়েছে।

এদের মধ্যে অনেক শিশুও রয়েছে। গাজা মিডিয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ৭ই অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েল অন্তত ৩৬টি হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে।

অন্যদিকে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এই হামলার কারণ হিসেবে জানিয়েছে, হাসপাতালটিকে হামাস তাদের ‘কমান্ড ও কন্ট্রোল’ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছিল। তবে তারা তাদের দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ পেশ করতে পারেনি।

অতীতেও বেসামরিক অবকাঠামো, যেমন হাসপাতালগুলোতে হামলার কারণ হিসেবে ইসরায়েল সশস্ত্র যোদ্ধাদের দায়ী করেছে, কিন্তু তাদের দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন এবং জেনেভা কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে বর্ণনা করেছে। তাদের মতে, আল-আহলি হাসপাতাল ছিল গাজার প্রাচীনতম এবং গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর একটি।

হামাস এই হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে চিহ্নিত করে এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছে।

হাসপাতালের চিকিৎসক রাজান আল-নাহাস জানিয়েছেন, হামলার ফলে হাসপাতালের পরীক্ষাগার, ফার্মেসি, জরুরি বিভাগ এবং অক্সিজেন ট্যাঙ্কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, “রাস্তায় অনেক রোগী, তাদের পরিবারগুলো চিকিৎসার জন্য ছোটাছুটি করছে।

তাদের জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা প্রয়োজন, কিন্তু কোনো আশ্রয় নেই।”

এই ঘটনার পরে, খান ইউনিস এবং নুসেইরাত এলাকার বাসিন্দাদের দ্রুত এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। একই সঙ্গে, তারা রাফাহ শহরকে অবরুদ্ধ করে ফেলেছে।

ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের মধ্যে হামাস গাজা থেকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে তিনটি রকেট নিক্ষেপ করেছে। যদিও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তাদের বিমান বাহিনী রকেটগুলো প্রতিহত করেছে।

গাজায় হাসপাতাল ও বেসামরিক স্থাপনায় হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *