যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রতিনিধিদের জন্য মাতৃত্বকালীন সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে রাজ্য আইনপ্রণেতাদের প্রচেষ্টা।
যুক্তরাষ্ট্রে নতুন বাবা-মায়েদের জন্য আইন প্রণয়নের কাজটি বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি, ফেডারেল কংগ্রেসে প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতিতে ভোট দেওয়ার যে প্রস্তাব আনা হয়েছিল, সেটি বাতিল হয়ে যায়।
এমন পরিস্থিতিতে, রাজ্যের আইনপ্রণেতারা এই সমস্যার সমাধানে নতুন উপায় খুঁজছেন, যাতে করে বাবা-মায়েরা তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন এবং একইসাথে পরিবারের প্রতিও মনোযোগ দিতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে, বিশেষ করে যেখানে মহিলাদের জনপ্রতিনিধিত্ব তুলনামূলকভাবে কম, সেখানে এই বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অনেক নারী, বিশেষ করে মায়েদের জন্য, আইনসভার কাজ এবং পরিবারের প্রতি মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
এই কারণে অনেক নারী জনপ্রতিনিধি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দ্বিধা বোধ করেন।
কিছু রাজ্যের আইনপ্রণেতারা এখন অনলাইন ভোটিং বা ভোট দেওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা চালু করার কথা ভাবছেন। এর ফলে, কোনো সদস্য যদি কোনো কারণে অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে না পারেন, তাহলে তিনি অনলাইনে ভোট দিতে পারবেন।
তাছাড়াও, মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা চলছে। এই ধরনের পদক্ষেপগুলি নতুন বাবা-মাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, কারণ এটি তাঁদের পরিবার এবং কর্মজীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
পরিবারকে সমর্থন করা এবং এমন আইনপ্রণেতাদের সমর্থন করা উচিত যারা পরিবারের সমস্যাগুলোকে অগ্রাধিকার দেন।
এটি কোনো রাজনৈতিক বিষয় হওয়া উচিত নয়।
কোভিড-১৯ মহামারীর সময় অনেক রাজ্যে অনলাইনে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। যদিও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরে সেই ব্যবস্থাগুলি তুলে নেওয়া হয়েছে, তবে কিছু রাজ্যে এখনো এটি চালু আছে।
উদাহরণস্বরূপ, মিনেসোটা এবং কলোরাডোর আইনসভায় বিশেষ পরিস্থিতিতে, যেমন স্বাস্থ্যগত সমস্যা বা সন্তানের জন্মের কারণে, অনলাইনে ভোট দেওয়ার অনুমতি রয়েছে। ভার্জিনিয়ার আইনসভায় এক নারী প্রতিনিধি সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর দূর থেকে ভোট দিতে পেরেছিলেন।
তবে, এই ধরনের ব্যবস্থার কিছু সমালোচকও রয়েছেন। তাঁদের মতে, এর ফলে আইনসভার কার্যকারিতা কমে যেতে পারে, কারণ সদস্যদের সশরীরে উপস্থিত থাকাটা জরুরি।
হাউস স্পিকার মাইক জনসন মনে করেন, আইন প্রণয়নের জন্য সদস্যদের সশরীরে উপস্থিত থাকা প্রয়োজন।
অন্যদিকে, অনেকে মনে করেন, এই ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে আরও বেশি সংখ্যক নারী রাজনীতিতে আসতে উৎসাহিত হবেন।
সরকারে যথেষ্ট সংখ্যক মা না থাকায় এই পরিবর্তনগুলো আনা কঠিন হয়ে পরে।
তবে, এই বিষয়ে বিভিন্ন রাজ্যের অভিজ্ঞতা ভিন্ন। হাওয়াই রাজ্যের প্রতিনিধি লরেন মাতসুমোতো জানান, তিনি যখন সন্তানের জন্ম দেন, তখন দূর থেকে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি।
পরে, মহামারী পরিস্থিতিতে অনলাইনে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা চালু হলেও, এটি সব রাজ্যের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে।
মিসৌরির প্রাক্তন প্রতিনিধি পিটার মেরিডিথ মনে করেন, সদস্যদের সশরীরে উপস্থিত থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ, তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে অনলাইনে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা সহায়ক হতে পারে।
তাঁর মতে, এমন একটি ব্যবস্থা থাকা দরকার যেখানে জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের পরিবারের জরুরি অবস্থার সময়ও তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এই আলোচনা বাংলাদেশের জনপ্রতিনিধি এবং নীতিনির্ধারকদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কারণ, আমাদের দেশেও নারীদের রাজনীতিতে আরও বেশি সক্রিয় হওয়ার সুযোগ তৈরি করতে হবে।
একইসঙ্গে, তাঁদের পরিবার এবং কর্মজীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস