উইমিংয়ে গর্ভপাতের অধিকার: আইনি লড়াই আরও কঠিন?

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইওমিং রাজ্যে গর্ভপাতের উপর নতুন আইনগুলি জটিলতা বাড়াচ্ছে, কারণ রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে এই বিষয়ক নিষেধাজ্ঞার শুনানি হতে চলেছে।

ওয়াইওমিংয়ের একমাত্র গর্ভপাত ক্লিনিক, ওয়েলস্প্রিং হেলথ অ্যাক্সেস-এর তরফে জানানো হয়েছে, নতুন কিছু বিধিনিষেধের কারণে তারা গর্ভপাত পরিষেবা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। এই ক্লিনিকটিকে এখন একটি অত্যাধুনিক সার্জিক্যাল সেন্টারের লাইসেন্স নিতে হবে, যার জন্য প্রায় পাঁচ লক্ষ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৫ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার সমান) খরচ হতে পারে। এছাড়াও, ক্লিনিকের চিকিৎসকদের স্থানীয় হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে, যদিও সেই এলাকার হাসপাতালগুলি তাদের ডাক্তারদের অন্তর্ভুক্ত করতে রাজি নয়।

এই পরিস্থিতিতে, ওয়াইওমিংয়ের গর্ভবতী মহিলাদের বাইরে, বিশেষ করে প্রতিবেশী রাজ্য কলোরাডোতে যেতে হচ্ছে, যেখানে গর্ভপাতের সুযোগ এখনো রয়েছে।

ওয়াইওমিংয়ের সুপ্রিম কোর্টে বুধবার এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি হওয়ার কথা। নিম্ন আদালত এর আগে রাজ্যের গর্ভপাত বিষয়ক কিছু নিষেধাজ্ঞাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে স্থগিত করেছিল। এখন শীর্ষ আদালত যদি সেই রায় বহাল রাখেও, রাজ্যে গর্ভপাতের সুযোগ কতটা সুনিশ্চিত হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

নতুন আইনগুলি গর্ভপাতকে আরও কঠিন করে তুলেছে। এর মধ্যে একটি আইন সরাসরি ওয়েলস্প্রিং হেলথ অ্যাক্সেস-কে লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছে। এই আইনের ফলে ক্লিনিকটিকে অস্ত্রোপচার কেন্দ্র হিসেবে লাইসেন্স নিতে হচ্ছে। এছাড়াও, গর্ভপাতের আগে মহিলাদের আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষার জন্য অন্তত ৪৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। এর জন্য তাদের প্রায় ২৫০ ডলার (প্রায় ২৭ হাজার ৫০০ টাকা) খরচ করতে হবে। এছাড়া যাতায়াতের খরচ তো আছেই, কারণ রাজ্যের অনেক গ্রামীণ অঞ্চলে এই পরিষেবা পাওয়া যায় না।

ওয়াইওমিংয়ের আইনপ্রণেতারা অবশ্য বলছেন, মহিলাদের সুরক্ষার কথা ভেবেই গর্ভপাত বিষয়ক আইনগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কিন্তু সমালোচকদের মতে, নতুন এই নিয়মগুলি কার্যত গর্ভপাত বন্ধ করারই নামান্তর।

গর্ভপাতের ওপর এই অনিশ্চয়তা ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। ওয়েলস্প্রিং হেলথ অ্যাক্সেস-এর তথ্য অনুযায়ী, আগে যেখানে প্রতিদিন ২২ জন রোগী আসতেন, সেখানে এখন এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫ জনে। গর্ভপাত পরিষেবা বন্ধ থাকার কারণে এখন তারা শুধুমাত্র হরমোন থেরাপির জন্য আসা রোগীদের চিকিৎসা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘গুটম্যাকার ইনস্টিটিউট’-এর তথ্য অনুযায়ী, এই ধরনের ‘টার্গেটেড রেগুলেশন অফ অ্যাবোরশন প্রোভাইডার্স’ (TRAP) আইন ইতিমধ্যে আরও ২৩টি রাজ্যে চালু হয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি রাজ্যে গর্ভপাত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ নয়, কিন্তু সেখানেও এই ধরনের বিধিনিষেধগুলি কার্যকর রয়েছে।

ওয়াইওমিংয়ের একজন মহিলা, যিনি আগে কলোরাডোতে গিয়ে গর্ভপাত করিয়েছিলেন, তিনি বর্তমান পরিস্থিতির শিকার নারীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, ওয়াইওমিং একটি বিশাল, গ্রামীণ রাজ্য, যেখানে আন্তঃরাজ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব একটা উন্নত নয়।

ওয়েলস্প্রিং হেলথ অ্যাক্সেস-এর কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন আইনের কারণে তাঁদের পরিষেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে। তাঁদের মতে, এই রাজ্যে গর্ভপাতের পক্ষে যথেষ্ট সমর্থন রয়েছে।

ওয়াইওমিংয়ে গর্ভপাতের অধিকার একটি স্বাস্থ্য অধিকার কিনা, সেই বিষয়েও বিতর্ক চলছে। রাজ্যের সুপ্রিম কোর্টে এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি হতে চলেছে, যেখানে গর্ভপাত বিরোধী বিভিন্ন সংগঠন এবং মহিলারা আইনের বিরুদ্ধে লড়ছেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *