পুরুষতান্ত্রিক জগৎ: অনলাইনে পুরুষদের মনস্তত্ত্ব এবং এর বিপদ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, সামাজিক মাধ্যম এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে পুরুষদের নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা, তথাকথিত ‘পুরুষতান্ত্রিক জগৎ’ (Manosphere) একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই জগৎটি একদিকে যেমন পুরুষদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ নিয়ে আসে, তেমনি এর কিছু দিক অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
বিশেষ করে, তরুণ প্রজন্মের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাব বিবেচনা করা জরুরি।
‘পুরুষতান্ত্রিক জগৎ’ মূলত পুরুষদের নিয়ে তৈরি হওয়া অনলাইন কমিউনিটি, ব্লগ, পডকাস্ট এবং সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপগুলোর সমষ্টি। এখানে পুরুষত্ব, সম্পর্ক, শারীরিক সক্ষমতা, এবং অন্যান্য পুরুষ-কেন্দ্রিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়।
এই আলোচনাগুলোর একটি অংশ সুস্থ এবং ইতিবাচক হতে পারে, যেখানে পুরুষরা নিজেদের সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করে এবং একে অপরের প্রতি সমর্থন জানায়। তবে, এই জগতের কিছু অংশে চরমপন্থী এবং বিতর্কিত ধারণাগুলোও বিস্তার লাভ করে।
যেমন, কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি (influencer) এখানে পুরুষদের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী পুরুষত্বের ধারণাগুলো (যেমন: কঠোরতা, আগ্রাসন) তুলে ধরেন। তারা প্রায়ই নারীদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করেন এবং সমাজে নারীদের ভূমিকা নিয়ে নেতিবাচক ধারণা প্রচার করেন।
এটি তরুণদের মধ্যে লিঙ্গ বৈষম্য, সহিংসতার সংস্কৃতি, এবং এক ধরনের মানসিক অসুস্থতা তৈরি করতে পারে।
এই ‘পুরুষতান্ত্রিক জগৎ’-এর উত্থানের পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। অনেক পুরুষ, বিশেষ করে তরুণরা, সমাজের বিভিন্ন দিক থেকে নিজেদের প্রত্যাখ্যাত মনে করে।
তারা মনে করে, সমাজে তাদের গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। কেউ কেউ তাদের ব্যক্তিগত জীবনে একাকীত্ব অনুভব করে এবং বন্ধুত্বের অভাব বোধ করে। আবার, অনেকে তাদের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক জীবনে সফল হতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়েন।
এই ধরনের মানসিক অবস্থার শিকার হওয়া পুরুষরা প্রায়ই অনলাইনে আশ্রয় খুঁজে নেয়, যেখানে তারা তাদের সমস্যার সমাধান খুঁজতে চেষ্টা করে।
এই জগৎ-এর কিছু অংশে, চরমপন্থী এবং বিদ্বেষপূর্ণ ধারণাগুলো খুব সহজেই প্রবেশ করে। এখানে পুরুষদের মধ্যে প্রচলিত ধারণাগুলো আরও শক্তিশালী হয়, যা তাদের মধ্যে প্রতিশোধের মানসিকতা তৈরি করে।
তারা সমাজের কিছু অংশের উপর (যেমন: নারী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়) তাদের ব্যর্থতার জন্য দোষারোপ করে।
অন্যদিকে, এই ‘পুরুষতান্ত্রিক জগৎ’-এর ইতিবাচক দিকগুলোও রয়েছে। অনেক পুরুষ এখানে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা করে, বন্ধু তৈরি করে এবং তাদের সমস্যাগুলো সমাধানে সাহায্য পায়।
তারা শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য চেষ্টা করে। তবে, এই ইতিবাচক দিকগুলো সত্ত্বেও, এর নেতিবাচক প্রভাবগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি।
বাংলাদেশেও এই ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে অনলাইন কনটেন্ট-এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে, এবং এর সাথে সাথে ‘পুরুষতান্ত্রিক জগৎ’-এর ধারণাগুলোও পরিচিতি লাভ করছে।
তাই, অভিভাবকদের এবং সমাজের সচেতন নাগরিকদের এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তরুণদের মধ্যে সুস্থ সম্পর্ক, ইতিবাচক মানসিকতা, এবং সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ তৈরি করতে হবে।
প্রয়োজনে, মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
পুরুষতান্ত্রিক জগতের ভালো-মন্দ দুটো দিকই রয়েছে। তাই, এর ভালো দিকগুলো গ্রহণ করে এবং খারাপ দিকগুলো থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতে হবে। তরুণদের জন্য একটি সুস্থ এবং ইতিবাচক সমাজ গঠনে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র: CNN