ট্রাম্পের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় বিরোধী পদক্ষেপ: কতটা ক্ষতির সম্ভবনা?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পদক্ষেপ দেশটির অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষণা এবং উদ্ভাবনে প্রসিদ্ধ এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপর আঘাত আসলে তা আমেরিকার ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি, ট্রাম্প প্রশাসন গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দ কমানো, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রদানে কড়াকড়ি আরোপের মতো কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং বিশ্ব বাজারে টিকে থাকার ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বোস্টন, অস্টিন, সিয়াটলের মতো শহরগুলোতে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণা এবং উন্নয়নের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। এখানে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি এবং দক্ষ জনশক্তি বিভিন্ন উন্নত শিল্পখাতে সরবরাহ করা হয়।

কম্পিউটিং, যোগাযোগ ব্যবস্থা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, চিকিৎসা সরঞ্জাম, বায়োটেকনোলজি এবং ফার্মাসিউটিক্যালসের মতো অত্যাধুনিক শিল্পখাতে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গ্র্যাজুয়েটদের বিশেষ চাহিদা রয়েছে। ব্রুকিংস মেট্রোর একজন সিনিয়র ফেলো, মার্ক মুরো, এই বিষয়টিকে “উচ্চ-মূল্যের, উন্নত শিল্প ব্যবস্থার মৌলিক অর্থনৈতিক ভিত্তি” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই সরকার, অ্যাকাডেমিয়া এবং ব্যবসার মধ্যে সহযোগিতা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি সেই সহযোগিতার পথে বাধা সৃষ্টি করছে।

গবেষণা খাতে সরকারি অনুদান কমানোর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে সমস্যার সম্মুখীন হবে। এছাড়া, বিদেশি শিক্ষার্থীদের উপর ভিসা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ আরোপের কারণে মেধাবী শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে আসতে নিরুৎসাহিত হতে পারে।

বোস্টন শহরের মেয়র মিশেল উ মনে করেন, গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দ কমানো “বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ক্ষতিকর”। তিনি বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ “আমাদের সম্মিলিত ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ”-এর পরিপন্থী।

যারা গবেষণা নির্ভর অর্থনীতির উপর নির্ভরশীল, তাদের জন্য এটি টিকে থাকার লড়াইয়ের সামিল। যুক্তরাষ্ট্রের অনেকগুলো প্রধান শহর, যেমন- বোস্টন, শিকাগো, সান ফ্রান্সিসকো বে এরিয়া, হিউস্টন, লস অ্যাঞ্জেলেস এবং নর্থ ক্যারোলাইনার রিসার্চ ট্রায়াঙ্গেল-এর মত জায়গাগুলো উন্নত প্রযুক্তির কেন্দ্র।

এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণা এবং মেধাবী কর্মী তৈরির মাধ্যমে এই শিল্পগুলোর বিকাশে সহায়তা করে। উদাহরণস্বরূপ, উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা থেকে তৈরি হওয়া পণ্যগুলির কারণে সেখানকার অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এসব পদক্ষেপের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এছাড়া, চীনের মতো দেশগুলো যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিতে দ্রুত উন্নতি করছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের এই ধরনের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় দেশটির অবস্থানকে দুর্বল করে দেবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির ক্ষেত্রে সরকারের নীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা খাতে অর্থ বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী উদ্ভাবনী পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *