হিটলারের হাতে নিহত ধর্মযাজক কীভাবে শ্বেতাঙ্গ খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদীদের কাছে নায়ক?

এক জন জার্মান ধর্মযাজক, যিনি হিটলারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, সেই ডিয়েট্রিখ বনহোফার-এর আদর্শ কিভাবে আজকের দিনে এসে শ্বেতাঙ্গ খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা ভুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেই বিষয়ে একটি চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি জার্মানির বিভীষিকাময় দিনগুলোতে, হিটলারের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন এই সাহসী মানুষটি।

১৯৪৫ সালের ৮ই এপ্রিল, গেস্টাপো বাহিনীর দুই সদস্য এসে বনহোফারকে গ্রেপ্তার করে।

ততদিনে বার্লিন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, হিটলার আত্মগোপন করেছেন। মিত্রশক্তি এবং সোভিয়েত বাহিনী নাৎসিদের পরাজয় প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে।

কিন্তু বনহোফার জানতেন, তাঁর মুক্তি নেই। তাঁকে একটি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরদিন ভোরে ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে দাঁড় করানো হয়। মৃত্যুর আগে তিনি নাকি বলেছিলেন, “আমার জন্য এ জীবনের শেষ, কিন্তু অনন্ত জীবনের শুরু।”

বনহোফার শুধু একজন ধর্মযাজক ছিলেন না, তিনি ছিলেন একাধারে ধর্মতত্ত্ববিদ এবং লেখক।

তাঁর লেখা ‘দ্য কস্ট অফ ডিসাইপলশিপ’ (The Cost of Discipleship) আজও খ্রিস্টান সমাজে গভীর প্রভাব ফেলে। বনো (U2 ব্যান্ডের প্রধান শিল্পী) থেকে শুরু করে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার পর্যন্ত অনেকেই তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছেন।

তাঁর জীবন নিয়ে তৈরি হয়েছে তথ্যচিত্র ও চলচ্চিত্র।

কিন্তু বর্তমানে বনহোফার নতুন এক বিতর্কের কেন্দ্রে—শ্বেতাঙ্গ খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদীদের বিতর্ক।

এই জাতীয়তাবাদীরা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য ধর্মকে ব্যবহার করে, যা বিভিন্ন সময়ে সংখ্যালঘুদের প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়াতে সহায়তা করে। এমনকি তারা মিথ্যাভাবে প্রচার করে যে, যুক্তরাষ্ট্র একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্র।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বনহোফারের জীবন ও কাজকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছেন।

তারা তাঁকে এমনভাবে তুলে ধরছেন, যেন তিনি শ্বেতাঙ্গ খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের একজন যোদ্ধা। তাঁরা বনহোফারকে সহিংসতা সমর্থনকারী হিসেবেও চিত্রিত করার চেষ্টা করছেন, যা সম্পূর্ণ ভুল।

অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এই বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে এরিক মেটাক্সাস নামক এক লেখকের একটি বইয়ের মাধ্যমে।

২০০৯ সালে প্রকাশিত ‘বনহোফার: পাদ্রি, শহীদ, ভাববাদী, গুপ্তচর’ (Bonhoeffer: Pastor, Martyr, Prophet, Spy) বইটিতে বনহোফারকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বনহোফারের পরিবারের সদস্যরাও এর তীব্র নিন্দা করেছেন।

তাঁদের মতে, বনহোফার কখনোই শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী বা সহিংস আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারতেন না।

বনহোফারের জীবন নিয়ে বিতর্ক একদিকে চললেও, তাঁর আদর্শ আজও মানুষকে আলো দেখায়। তিনি নাৎসিদের বিভীষিকার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন এবং অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *