ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে ফ্রান্স খুব শীঘ্রই ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত। এই পদক্ষেপের ফলে ফরাসি সরকার সম্ভবত ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বাদশ দেশ হবে যারা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে।
গত বছর স্পেন, আয়ারল্যান্ড এবং স্লোভেনিয়া ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়। এমন পরিস্থিতিতে ফ্রান্সের এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে, অনেকের মতে, কেবল স্বীকৃতি প্রদানই যথেষ্ট নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হতে পারে, বিশেষ করে যদি ফ্রান্স ১৯৬৭ সালের সীমান্ত এবং পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে সমর্থন করে। তবে, ইসরায়েলের সঙ্গে ফ্রান্সের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান।
তাই অনেকে মনে করেন, ফরাসি সরকারের এই স্বীকৃতি একটি ‘লোক দেখানো’ বিষয় হতে পারে। ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং গাজায় চলমান গণহত্যার প্রেক্ষাপটে ফ্রান্সের আরও অনেক কিছু করার আছে।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনে ফ্রান্সের একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে ফ্রান্সের প্রাক্তন ঔপনিবেশিক প্রভাব ছিল। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে ফরাসি সরকার ফিলিস্তিনের প্রতি আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) যখন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে, তখন ফ্রান্স তাকে কার্যত দায়মুক্তি দেয়। এমনকি নেতানিয়াহুর যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার জন্য ফ্রান্স তার আকাশপথ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল, যা আইসিসির সঙ্গে করা চুক্তির পরিপন্থী ছিল।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি ফ্রান্সের সমর্থন কেবল স্বীকৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল ও বসতি স্থাপন বন্ধ করতে ফ্রান্সকে আরও জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।
ফিলিস্তিনের জনগণের স্বাধীনতা, সমতা এবং ভ্রাতৃত্বের প্রতি সমর্থন জানানো উচিত।
বিশ্লেষকদের মতে, ফ্রান্স যদি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক হতে চায়, তবে তাকে জাতিসংঘের সনদ এবং রোম সংবিধি অনুযায়ী কাজ করতে হবে। ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনি ভূমি দখল ও বসতি স্থাপন বন্ধ করতে চাপ দিতে হবে।
একই সঙ্গে, ফিলিস্তিনের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে এবং মানবাধিকারের প্রশ্নে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য হিসেবে ফ্রান্সকে স্পেনের মতো দেশগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পর্যালোচনা করতে হবে।
ইসরায়েল সরকার ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিরোধিতা করবে এবং এর প্রতিরোধে সম্ভাব্য সব কৌশল অবলম্বন করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ফ্রান্সকে তার নীতিতে অবিচল থাকতে হবে এবং ইসরায়েলের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের কাছে নতি স্বীকার করা উচিত হবে না।
বর্তমানে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমি থেকে বিতাড়িত করার নীতিকে সমর্থন করছে, তখন ফ্রান্সের সামনে এই সুযোগ রয়েছে। ফ্রান্স যদি ফিলিস্তিনের পাশে থাকে, তবে তা আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান জানানো হবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা