ভারতে মুসলিমদের প্রতিবাদ, ওয়াকফ বিল নিয়ে সেনা নামানো হলো!

পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমদের ওয়াকফ সম্পত্তি বিষয়ক বিল নিয়ে চলমান বিতর্কের জেরে সেখানে সেনা মোতায়েন করেছে ভারত সরকার। বিতর্কিত এই বিলের বিরুদ্ধে হওয়া বিক্ষোভে তিনজন নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলায় সম্প্রতি এই বিক্ষোভ চরম আকার ধারণ করে।

এই বিলটি মূলত মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় সম্পত্তি, অর্থাৎ ওয়াকফ সম্পত্তি দেখাশোনার ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনবে। সমালোচকদের মতে, এই বিলের মাধ্যমে মুসলিমদের ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনার অধিকার দুর্বল হয়ে যাবে।

বিলটি পাস হওয়ার পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে প্রতিবাদ শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়, যার ফলস্বরূপ হতাহতের ঘটনা ঘটে।

বিক্ষোভের জেরে এখন পর্যন্ত দেড়শতাধিক মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজ্যের পরিস্থিতি বিবেচনায় কলকাতা হাইকোর্ট জরুরি ভিত্তিতে সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীকে (বিএসএফ) সেখানে মোতায়েন করার নির্দেশ দেয়।

বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ার বিভাগের ইন্সপেক্টর জেনারেল কার্নি সিং জানান, স্থানীয় পুলিশকে সহায়তার জন্য তাদের পাঠানো হয়েছে, কোনো “স্বাধীন অভিযান”-এর জন্য নয়।

ওয়াকফ হলো মুসলিমদের নিজস্ব সম্পত্তি, যা ধর্মীয় বা জনহিতকর কাজের জন্য উৎসর্গ করা হয়। নতুন বিলে অমুসলিমদেরও এই ওয়াকফ সম্পত্তি দেখাশোনার দায়িত্বে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে, যা মুসলিমদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

তাদের আশঙ্কা, এর ফলে ঐতিহ্যবাহী মসজিদ, দোকান, কবরস্থানসহ ওয়াকফ সম্পত্তির অপব্যবহার হতে পারে। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য বলছে, এই বিলের মূল উদ্দেশ্য হলো ওয়াকফ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা এবং দুর্নীতি কমানো।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যে বলেছেন, তার সরকার রাজ্যে এই আইন কার্যকর করবে না। তিনি জনগণের প্রতি শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন এবং ধর্মকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত না হতে অনুরোধ করেছেন।

বিরোধী দলগুলো এই বিলকে ভারতের মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর আঘাত হিসেবে বর্ণনা করছে। তাদের মতে, এটি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানে প্রদত্ত অধিকারের লঙ্ঘন।

বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, এই বিলটি “আজ মুসলিমদের লক্ষ্য করে তৈরি করা হলেও, ভবিষ্যতে অন্যান্য সম্প্রদায়ের প্রতি এটি ব্যবহারের একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।”

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *