ট্রাম্পের হুট করে নেওয়া সিদ্ধান্তে বিশ্ব টালমাটাল!

ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি আবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে ফিরে এসেছেন, তাঁর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ধরন নিয়ে বর্তমানে আন্তর্জাতিক মহলে বেশ আলোচনা চলছে। তিনি প্রায়ই তাঁর ‘অনুভূতি’ বা ‘ইনস্টিঙ্কট’-এর ওপর নির্ভর করেন, যা অনেক সময় প্রচলিত নিয়ম-নীতির বাইরে চলে যায়।

সম্প্রতি বাণিজ্য নীতি নিয়ে তাঁর কিছু পদক্ষেপ এবং সেই সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলি এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

গত সপ্তাহে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “আমি মূলত আমার প্রবৃত্তি বা সহজাত বোধ থেকে কাজ করি। এক্ষেত্রে কাগজ-কলম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার তেমন প্রয়োজন হয় না।”

এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি বুঝিয়ে দেন যে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাঁর নিজস্ব একটা পদ্ধতি রয়েছে।

হোয়াইট হাউস যদিও এই ধরনের সমালোচনার সঙ্গে একমত নয়।

তাঁদের মতে, ট্রাম্প জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন এবং তিনি তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করছেন।

তবে সমালোচকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা গণতন্ত্রের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

তাঁদের মতে, কোনো বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পরিবর্তে ‘অনুভূতি’র ওপর নির্ভর করা হলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা হয় না, যা ভুল সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কথা বলা যায়।

তিনি কিছুদিনের জন্য শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যা পরে স্থগিত করা হয়।

এই সিদ্ধান্তের ফলে শেয়ার বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়।

যদিও চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক এখনো বহাল আছে, তবে অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য কিছু শুল্ক আপাতত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে, বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অত্যন্ত জটিল একটি বিষয় এবং এর ওপর কোনো একক ব্যক্তির ‘খেয়ালখুশি’র ওপর নির্ভর করা উচিত নয়।

তাদের মতে, স্বল্প সময়ের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করা কঠিন এবং এর ফলস্বরূপ ‘উপরের মোড়কে’র আড়ালে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চাপা পড়ে যেতে পারে।

ট্রাম্পের এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা শুধু আমেরিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।

গ্রিনল্যান্ডকে আমেরিকার অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়েও তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

ভাইস প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি গ্রিনল্যান্ড সফর করেন, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল আর্কটিকে রাশিয়া ও চীনের প্রভাব বিস্তার রোধ করা এবং ট্রাম্পের এই আগ্রহের কারণ ব্যাখ্যা করা।

ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে তাঁর ‘অনুভূতি’কে বাস্তবে রূপ দিতে চেষ্টা করেছেন, তা ম্যানহাটনের আকাশচুম্বী অট্টালিকা হোক বা আটলান্টিক সিটির ক্যাসিনো।

একবার তিনি তাঁর ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ কম দেখানোর অভিযোগে একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন।

হোয়াইট হাউসের প্রাক্তন চিফ অফ স্টাফ এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টা লিওন প্যানেটা মনে করেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে বিস্তারিত আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া থাকা উচিত।

তিনি বলেন, “যদি সবকিছু উপেক্ষা করে, শুধু প্রবৃত্তির ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তবে প্রতিটি সিদ্ধান্তই একটি বড় জুয়ার মতো হয়ে দাঁড়ায়।”

ট্রাম্পের এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ার কারণে অনেক সময় তাঁর অনুসারীদের মধ্যে এক ধরনের আনুগত্য লক্ষ্য করা যায়।

সম্প্রতি এক রিপাবলিকান ডিনারে তিনি বলেছিলেন, বিভিন্ন দেশের নেতারা তাঁর বাণিজ্য নীতির বিষয়ে তাঁকে রাজি করানোর জন্য ‘তাঁর পায়ে পড়ছেন’।

মোটকথা, ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত গ্রহণের এই বিশেষ ধরনের কারণে বর্তমানে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অনেক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।

তাঁর এই পদ্ধতি কতটা কার্যকর, তা ভবিষ্যতে আরও স্পষ্ট হবে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *