নব্বই দশকের শুরু থেকে বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে, কিন্তু এর বিভীষিকা এখনো অনেক দেশের মানুষের মনে গভীর ক্ষত তৈরি করে।
এমনই এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে নরওয়েতে তৈরি হচ্ছে এক নতুন স্মৃতিসৌধ। ২০১১ সালের ২২শে জুলাই তারিখে দেশটির রাজধানী অসলো এবং নিকটবর্তী একটি দ্বীপে চালানো নৃশংস হামলায় নিহত হয়েছিলেন ৭৭ জন নিরীহ মানুষ।
সেই ঘটনার শিকারদের স্মরণে নির্মিতব্য এই স্মৃতিসৌধের নকশা সম্প্রতি উন্মোচন করা হয়েছে।
নতুন এই স্মৃতিসৌধটি তৈরি করছেন নরওয়েজিয়ান শিল্পী ম্যাথিয়াস ফাল্ডবাকেন। এর নকশার কেন্দ্রে রয়েছে একটি মোজাইক, যা প্রায় ১২ মিটার উঁচু এবং ১৫ মিটার চওড়া।
এই মোজাইকে প্রায় পাঁচ লক্ষ পাথর ব্যবহার করা হবে। মূল ছবিতে দেখা যাবে একটি পরিযায়ী পাখি, যা দ্বীপের শান্ত জলের প্রতিবিম্বের সঙ্গে মিশে গেছে।
শিল্পীর মতে, এই পাখির প্রতিকৃতি মানুষের জীবনের ক্ষণস্থায়ীত্ব এবং প্রকৃতির মাঝে টিকে থাকার সংগ্রামের প্রতীক। এটি একইসঙ্গে শোক এবং প্রতিরোধের বার্তাও বহন করে।
২০১১ সালের সেই ভয়াবহ দিনে, উগ্রবাদী অ্যান্ডার্স ব্রেভিক প্রথমে অসলোতে বোমা হামলা চালান, যাতে ৮ জন নিহত হন। এরপর তিনি কাছেই অবস্থিত ইউটোয়া দ্বীপে তরুণদের একটি শিবিরে নির্বিচারে গুলি চালান, যেখানে আরও ৬৯ জন প্রাণ হারান।
এই নৃশংসতা নরওয়ের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এই স্মৃতিসৌধটি সেই ঘটনার শিকার হওয়াদের প্রতি উৎসর্গীকৃত।
স্মৃতিসৌধের নকশা তৈরির প্রক্রিয়াটিও ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সরাসরি অংশগ্রহণে এই নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
যারা স্বজন হারিয়েছেন, তাদের অনুভূতি এবং আকাঙ্ক্ষাগুলোকে সম্মান জানিয়ে এই কাজটি করা হয়েছে। স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তরে নিহতদের নাম খোদাই করা হবে, যা তাঁদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাবে।
শিল্পী ফাল্ডবাকেন জানান, তিনি এই কাজটি করতে গিয়ে নিজের শিল্পী সত্ত্বাকে একপাশে সরিয়ে রেখেছিলেন।
তাঁর প্রধান লক্ষ্য ছিল, শোকাহত মানুষের অনুভূতিকে সম্মান জানানো এবং তাঁদের বেদনার প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলা। তিনি মনে করেন, মোজাইক একটি উপযুক্ত মাধ্যম, যা সময়ের বিরুদ্ধে টিকে থাকতে পারে।
আগুন, ভূমিকম্প বা বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগও এর ক্ষতি করতে পারে না।
এই স্মৃতিসৌধটি শুধু একটি স্মৃতিচিহ্নই নয়, বরং এটি চরমপন্থা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা।
নরওয়ের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমানে দেশটির অর্থমন্ত্রী ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ এই প্রসঙ্গে বলেন, “সন্ত্রাসবাদ বা চরমপন্থা রুখতে কোনো ব্যবস্থা সম্পূর্ণ নিশ্চয়তা দিতে পারে না।
তবে এই স্মৃতিসৌধ আমাদের মনে করিয়ে দেবে, এমন একটি ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা কখনোই চাই না। একইসঙ্গে এটি আমাদের মুক্ত ও উদার সমাজের গুরুত্বও তুলে ধরবে।”
২০২৬ সালে এই স্মৃতিসৌধটি উন্মোচন করার কথা রয়েছে, যা এই ভয়াবহ হামলার ১৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে নিবেদন করা হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান