শিরোনাম: অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী সংক্রমণের শিকার, বিশ্বে প্রতি বছর মারা যাচ্ছে ৩০ লক্ষাধিক শিশু: বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ
বিশ্বজুড়ে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হারানোর কারণে সৃষ্ট সংক্রমণ মারাত্মক রূপ নিচ্ছে। এর ফলে, ২০২৩ সালে বিশ্বে ৩০ লক্ষাধিক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এই ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে, যা আমাদের সকলের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ। বিশেষ করে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলোতে শিশুদের মধ্যে এই ধরনের সংক্রমণ ব্যাপক হারে দেখা যাচ্ছে।
গবেষণা অনুসারে, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) বা জীবাণুনাশক প্রতিরোধী ক্ষমতার কারণে শিশুদের শরীরে সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করছে। এর প্রধান কারণ হলো, অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার অথবা অপব্যবহার।
অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা সাধারণ সংক্রমণের ক্ষেত্রেও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন, যা ব্যাকটেরিয়ার প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলছে। এর ফলে, যখন গুরুতর সংক্রমণের চিকিৎসা প্রয়োজন, তখন অ্যান্টিবায়োটিকগুলো আর কাজ করছে না।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে ৭ লক্ষ ৫২ হাজারের বেশি এবং আফ্রিকাতে ৬ লক্ষ ৫৯ হাজারের বেশি শিশুর মৃত্যু হয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী সংক্রমণের কারণে। শুধু তাই নয়, বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও ১৫ লক্ষাধিক শিশুর মৃত্যু হয়েছে এই একই কারণে।
ক্লিন্টন হেলথ অ্যাক্সেস ইনিশিয়েটিভের অধ্যাপক জোসেফ হারওয়েল এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি জানান, কিছু অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে ব্যাকটেরিয়াগুলো শক্তিশালী হয়ে উঠছে এবং অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করছে।
বিশেষজ্ঞরা ‘ওয়াচ’ এবং ‘রিজার্ভ’ শ্রেণির অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক করেছেন। ‘ওয়াচ’ শ্রেণির অ্যান্টিবায়োটিকগুলো প্রতিরোধের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এবং ‘রিজার্ভ’ অ্যান্টিবায়োটিকগুলো হলো গুরুতর ও বহু-ঔষধ প্রতিরোধী সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য সংরক্ষিত।
হারওয়েল বলেন, শিশুদের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিকের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার “গুরুতর দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকি” তৈরি করছে।
নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী সংক্রমণের বিস্তারের পেছনে আরও কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হাসপাতালের অতিরিক্ত ভিড়, দুর্বল স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং সংক্রমণ প্রতিরোধের দুর্বল পদক্ষেপ।
এই দেশগুলোতে কার্যকর নজরদারির অভাবের কারণে প্রতিরোধের প্রবণতা চিহ্নিত করা এবং উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা কঠিন হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি আমরা এই বিষয়টির দিকে তাকাই, তাহলে উদ্বেগের কারণ আরও বাড়ে। আমাদের দেশেও অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার অনেক বেশি।
স্বাস্থ্যবিধি এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থার দুর্বলতাও একটি বড় সমস্যা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার এবং সংক্রমণ প্রতিরোধের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সমস্যা মোকাবিলায় আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। অ্যান্টিবায়োটিকের যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং স্বাস্থ্যবিধি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নতি ঘটানো সময়ের দাবি। তা না হলে, শিশুদের জীবন আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা