চীনকে নিশানা করতে পারে যুক্তরাজ্য! চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস!

শিরোনাম: যুক্তরাজ্যের নতুন আইনে চীনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের সম্ভাবনা, উদ্বিগ্ন বাণিজ্য সম্পর্ক

যুক্তরাজ্যে বিদেশি প্রভাব বিস্তারের উপর নজরদারির জন্য একটি নতুন আইনের অধীনে চীনের কিছু অংশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার চিন্তাভাবনা চলছে। এই খবরটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন যুক্তরাজ্য এবং চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা চলছে।

১ জুলাই থেকে কার্যকর হতে যাওয়া ‘বিদেশি প্রভাব বিস্তার রোধে নিবন্ধন প্রক্রিয়া’ (Foreign Influence Registration Scheme – FIRS)-এর অধীনে এই পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।

এই নতুন আইনের মূল উদ্দেশ্য হলো, বিদেশি শক্তিগুলোর দ্বারা যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরে সংঘটিত সম্ভাব্য হস্তক্ষেপগুলো চিহ্নিত করা এবং সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। এই স্কিমের অধীনে, যেসব দেশ বা সত্তাকে ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করা হবে, তাদের কার্যক্রমের বিষয়ে অতিরিক্ত তথ্য প্রকাশ করতে হবে।

যুক্তরাজ্য সরকার এরই মধ্যে রাশিয়া ও ইরানকে এই ‘উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ’ দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এখন আলোচনা চলছে চীনকে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে কিনা, সেই বিষয়ে।

সরকারের একটি সূত্র জানাচ্ছে, চীনকে সরাসরি এই স্কিমের আওতায় আনা নাও হতে পারে। তবে, চীনের নিরাপত্তা বিভাগের কিছু অংশকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

এর কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটিও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। উল্লেখ্য, চীন বর্তমানে যুক্তরাজ্যের পঞ্চম বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার।

এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা এমআই-ফাইভ (MI5)-এর প্রধান কেন ম্যাককালাম এর আগে বলেছিলেন যে, চীনের গোয়েন্দা সংস্থা এবং ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি (Chinese Communist Party – CCP)-র কিছু অংশ যুক্তরাজ্যের উপর প্রভাব বিস্তারের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম চালাচ্ছে।

তিনি বিশেষভাবে ‘চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ’ (United Front Work Department – UFWD)-এর কথা উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, এই বিভাগটি যুক্তরাজ্যের ভেতরে থাকা চীনাপন্থী কণ্ঠস্বরকে শক্তিশালী করতে এবং যারা চীনের সমালোচনা করে তাদের কণ্ঠরোধ করতে কাজ করে।

সরকারের ভেতরে থাকা বিভিন্ন মহল এই বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করছে। কেউ কেউ মনে করেন, চীনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিলে তা যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

আবার অনেকে মনে করেন, নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনা করে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এই বিতর্কের মধ্যেই সরকার চীনের নিরাপত্তা বিভাগের কিছু নির্দিষ্ট অংশের উপর নজরদারি করার কথা ভাবছে।

এর মধ্যে রয়েছে চীনের ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়’ (Ministry of State Security), ‘চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ’ (UFWD) এবং চীনের সামরিক বাহিনী ‘গণমুক্তি ফৌজ’ (People’s Liberation Army – PLA)।

এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের বিরোধী দলগুলো চীনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। একইসঙ্গে, সরকার চীন এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতেও আগ্রহী।

যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যমন্ত্রী সম্প্রতি চীনের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা করেছেন।

সব মিলিয়ে, যুক্তরাজ্যের এই নতুন আইন একদিকে যেমন বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা, তেমনি এর মাধ্যমে চীন-যুক্তরাজ্যের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়েও নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *