যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি, চীন থেকে আমদানি করা ইলেক্ট্রনিক পণ্যের ওপর শুল্ক ছাড় বেশি দিন টিকবে না। স্মার্টফোন, ল্যাপটপসহ বিভিন্ন পণ্যের ওপর এই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধ আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের বাজারেও।
রবিবার ট্রাম্প এক বিবৃতিতে জানান, এই ছাড় সাময়িক এবং খুব শীঘ্রই এইসব পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করা হবে। তিনি বলেন, “এই পণ্যগুলোর ওপর বিদ্যমান ২০ শতাংশ ফেন্টানাইল শুল্ক বহাল থাকবে এবং সেগুলোকে ভিন্ন একটি ‘শুল্কের ঝুড়িতে’ স্থানান্তরিত করা হচ্ছে।” একই সঙ্গে, ট্রাম্প সেমিকন্ডাক্টর শিল্প এবং ইলেক্ট্রনিক পণ্যের সরবরাহ শৃঙ্খলের ওপর একটি জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক বাণিজ্য তদন্তের ঘোষণা করেন। তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা অন্য কোনো দেশের, বিশেষ করে চীনের মতো বাণিজ্যিকভাবে বৈরী দেশের কাছে জিম্মি হতে রাজি নই।”
হোয়াইট হাউজ শুক্রবার চীনের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক থেকে কিছু ইলেক্ট্রনিক পণ্যকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘোষণা করেছিল। ধারণা করা হচ্ছিল, এর ফলে মার্কিন শেয়ার বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা আসবে। অ্যাপল এবং চিপ প্রস্তুতকারক এনভিডিয়ার শেয়ারের দামও বাড়তে শুরু করে, কারণ তাদের পণ্যগুলো যুক্তরাষ্ট্রে আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কের বোঝা কমেছিল।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিল এবং এটিকে ‘একতরফা শুল্ক’ নীতি থেকে সরে আসার ‘ছোট পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি এই শুল্ক সম্পূর্ণভাবে বাতিলের আহ্বান জানায়। চীনের তথ্য শিল্প উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রেসিডেন্ট ঝাং লি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে জানান, এই ছাড় প্রমাণ করে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য চীন কতটা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা উৎপাদনের জন্য মূলত চীনের ওপর নির্ভরশীল।
তবে ট্রাম্পের বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুজনিক রবিবার জানান, আগামী দুই মাসের মধ্যে চীন থেকে আসা গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি পণ্যের পাশাপাশি সেমিকন্ডাক্টর পণ্যের ওপর আলাদা শুল্ক আরোপ করা হবে। তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প স্মার্টফোন, কম্পিউটার ও অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক পণ্যের ওপর ‘বিশেষ ধরনের শুল্ক’ আরোপ করতে যাচ্ছেন, যা সেমিকন্ডাক্টর এবং ফার্মাসিউটিক্যালসের ওপর আরোপিত শুল্কের বাইরে হবে। এই শুল্কগুলো ট্রাম্পের ‘পাল্টা শুল্কের’ অন্তর্ভুক্ত হবে না। লুজনিক আরও জানান, এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো এই ধরনের পণ্যের উৎপাদন আমেরিকায় ফিরিয়ে আনা, কারণ এগুলো জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে এই বাণিজ্য যুদ্ধ এক নতুন মোড় নিয়েছে। ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সোমবার বলেছেন, বাণিজ্য যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়। তিনি আরও উল্লেখ করেন, সংরক্ষণবাদ কোনো ফল বয়ে আনে না।
এই পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর ১৪৫ শতাংশ এবং চীন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। চীনের শুল্ক বিভাগ এক বিবৃতিতে জানায়, রপ্তানির ক্ষেত্রে তারা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেও আকাশ ভেঙে পড়বে না। তারা অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে এবং একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ বাজার তৈরির চেষ্টা করছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতিতে ঘন ঘন পরিবর্তনের কারণে ২০২০ সালের কোভিড মহামারীর পর ওয়াল স্ট্রিটে সবচেয়ে বেশি অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস ৫০০ সূচক ১০ শতাংশের বেশি কমেছে।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দিতে পারে এবং মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেট সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন এই নীতির সমালোচনা করে বলেছেন, “এখানে কোনো শুল্ক নীতি নেই, আছে শুধু বিশৃঙ্খলা এবং দুর্নীতি।”
এই বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে চীন প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা করছে। শি জিনপিং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে সোমবার ভিয়েতনামে যান।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান