যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ নতুন করে তীব্র রূপ নিয়েছে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর শুল্কের বোঝা বাড়িয়েছে, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর কিছু প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক অত্যন্ত জটিল। যুক্তরাষ্ট্র যেখানে চীনের তৈরি বিভিন্ন পণ্য, যেমন – ইলেকট্রনিকস, বিরল খনিজ পদার্থ, ওষুধ এবং পোশাকের ওপর নির্ভরশীল, সেখানে চীনও যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি পণ্য, যেমন – সয়াবিন ও শস্যের ওপর নির্ভরশীল।
উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপ করায় বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এর ফলে, উভয় দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি, বিশ্বজুড়ে পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চীনের সরকার তাদের দেশের জনগণের ওপর আরও বেশি অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে প্রস্তুত থাকতে পারে, যাতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই গুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ে হেরে না যায়। তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া কিছু সিদ্ধান্ত অনেক সময় অস্পষ্ট মনে হয়েছে, যা বাজারের উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
উদাহরণস্বরূপ, প্রথমে চীনের তৈরি কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেওয়া হলেও, পরে আবার তা পুনর্বিবেচনা করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতির এই পরিবর্তনগুলো অনেক সময় পরিকল্পনাহীন ও তাৎক্ষণিক বলে মনে হয়েছে। এর কারণ হিসেবে হোয়াইট হাউজ থেকে জানানো হয়েছে, এসব পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য জরুরি।
তবে, সমালোচকরা বলছেন, এই ধরনের সিদ্ধান্তগুলো বাজারের স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
এই বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যবৃদ্ধি এবং পণ্যের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। একইসঙ্গে, বিশ্ববাজারে এর প্রভাব ইতিমধ্যেই দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে, যার ফলে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের অর্থনীতিও ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। কারণ, চীন বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার। বিশেষ করে, তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালের একটা বড় অংশ আসে চীন থেকে।
বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে চীনের উৎপাদন খরচ বাড়লে, সেই প্রভাব বাংলাদেশের বাজারেও পড়তে পারে।
এছাড়াও, বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যেও প্রভাব পড়তে পারে। বাণিজ্য যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে, বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে, যা বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্য নীতির মূল উদ্দেশ্য হলো, চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ককে নতুনভাবে সাজানো। তবে, এই পদক্ষেপ কতটা সফল হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
কারণ, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যুক্তরাষ্ট্রের এই চাপের কাছে নতি স্বীকার করতে নারাজ।
সব মিলিয়ে, যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তা বাংলাদেশের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায়, বাংলাদেশকে তার বাণিজ্য নীতি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কগুলো আরও সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন