জাপানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ২০২৫ সালের ওসাকা এক্সপো নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বিশাল অংকের অর্থ ব্যয়ে নির্মিত এই প্রদর্শনী কেন্দ্রটির টিকিট বিক্রি কমে যাওয়া এবং অন্যান্য কিছু কারণে এর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই এক্সপো সম্ভবত ২০২১ সালের টোকিও অলিম্পিকের মতোই আর্থিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
“আমাদের জীবনের জন্য ভবিষ্যৎ সমাজ গঠন” – এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত এই প্রদর্শনীটি জাপানের ওসাকায় শুরু হয়েছে।
বিশ্বের বৃহত্তম কাঠের কাঠামো, জাপানি স্থপতি সউ ফুজিমোতোর গ্র্যান্ড রিং-এর অভ্যন্তরে এর আয়োজন করা হয়েছে।
এতে ১৬০টির বেশি দেশ তাদের বিভিন্ন প্রদর্শনী দেখাচ্ছে, যেখানে একটি মঙ্গলের উল্কাপিণ্ড থেকে পরীক্ষাগারে তৈরি হৃদপিণ্ড পর্যন্ত রয়েছে।
তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, টিকিট বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।
কর্তৃপক্ষের আশা ছিল, প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ টিকিট বিক্রি হবে, কিন্তু উদ্বোধনের আগে পর্যন্ত মাত্র ৯০ লক্ষ টিকিট বিক্রি হয়েছে।
টিকিট বিক্রি থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের মাধ্যমে প্রদর্শনীটির ৮০ শতাংশের বেশি পরিচালন ব্যয় মেটানোর যে পরিকল্পনা ছিল, তা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, নির্মাণ খরচও বেড়েছে।
প্রথমে এর জন্য ২৩৫ বিলিয়ন ইয়েন (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা) খরচ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বর্তমানে তা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই এক্সপো সম্ভবত টোকিও অলিম্পিকের ব্যর্থতা পুনরায় ঘটাতে পারে।
টোকিও অলিম্পিকের সময়ও নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষকে বেশ বিপাকে পড়তে হয়েছিল।
প্রযুক্তি বিশ্লেষক এবং টোকিও ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির প্রাক্তন শিক্ষক মোরিনোসুকে কাওয়াগুচি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, “সরকারের জন্য টোকিও অলিম্পিক একটি ট্রমা ছিল, কিন্তু এই এক্সপো সম্ভবত আরেকটি ট্রমা তৈরি করতে চলেছে।”
আগের প্রদর্শনীগুলোর তুলনায় এবারের উন্মাদনা কিছুটা কম।
১৯৭০ সালে ওসাকায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব মেলায় প্রায় ৬ কোটি ৪০ লক্ষ দর্শক সমাগম হয়েছিল।
কাওয়াগুচি মনে করেন, বয়স্ক জাপানি নাগরিকরা নতুন প্রযুক্তির প্রতি আগের মতো আগ্রহী নন।
অন্যদিকে, জাপানের আইনপ্রণেতারা, যাদের বয়স সাধারণত ৫০ বছরের বেশি, তারা সম্ভবত ১৯৭০ সালের ওসাকা বিশ্ব মেলার স্মৃতি ধরে রেখেছেন।
কাওয়াগুচি বলেন, “তারা ভেবেছিল, এটি অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য একটি অনুঘটক হতে পারে, তবে এটি নিছক একটি বিভ্রম।”
কিছু পর্যবেক্ষক আশঙ্কা করছেন যে, এই এক্সপো ২০০০ সালের হ্যানোভার বিশ্ব মেলার পথ অনুসরণ করতে পারে, যেখানে প্রত্যাশার অর্ধেক দর্শকও আসেনি এবং প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি লোকসান হয়েছিল।
জাপান সরকার আশা করছে, এই এক্সপো প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন ইয়েন (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা) মূল্যের অর্থনৈতিক সুবিধা তৈরি করবে।
যদিও, সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে বাণিজ্য ক্ষেত্রে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, তা এই এক্সপোর জন্য ভালো ফল নাও আনতে পারে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, জাপানে বর্তমানে পর্যটকদের আগমন বাড়ছে।
গত বছর দেশটি রেকর্ড সংখ্যক প্রায় ৩ কোটি ৭০ লক্ষ পর্যটকদের স্বাগত জানিয়েছে, যা প্রাক-মহামারী সময়ের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি।
তবে, এই এক্সপোতে আগতদের অধিকাংশই জাপানের নাগরিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
২০২৫ বিশ্ব এক্সপোর জাপান অ্যাসোসিয়েশন অনুমান করেছে, প্রায় ৯০ শতাংশ দর্শক দেশের বাসিন্দা হবেন।
প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের কারণেও অনেকে এখন আর সরাসরি মেলায় যেতে আগ্রহী নন।
কাওয়াগুচি বলেন, “বাড়িতে বসেই সবকিছু উপভোগ করা সম্ভব।
তাই এই ধরনের এক্সপো অনলাইনেও করা যেতে পারে।”
অন্যদিকে, কেউ কেউ মনে করেন, এই এক্সপো প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং আঞ্চলিক সম্পর্ক জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এক্সপোর ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
তবে, সরকার এই স্থানটিকে অন্য কোনো কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা