তুর্কি ছাত্রী রুয়েসা ওজতুর্ককে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) কর্তৃপক্ষের হেফাজতে নেওয়ার ঘটনা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। হামাসকে সমর্থনের অভিযোগে অভিযুক্ত এই শিক্ষার্থীর আটকের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সোমবার ভার্মন্টের একটি আদালতে শুনানির কথা রয়েছে।
রুয়েসা বর্তমানে লুইজিয়ানার একটি ডিটেনশন সেন্টারে বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন।
তুফ্টস ইউনিভার্সিটির পিএইচডি শিক্ষার্থী রুয়েসা ওজতুর্কের আটকের কারণ নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। জানা গেছে আটকের কয়েক দিন আগে স্টেট ডিপার্টমেন্টের একটি অফিস, রুয়েসার সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ বা ইহুদি বিদ্বেষের কোনো সম্পর্ক খুঁজে পায়নি।
ওয়াশিংটন পোস্টের একটি প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয় রুয়েসাকে আটকের আগে মার্কিন সরকারের ডেটাবেসে তার নাম অনুসন্ধানে কোনো সন্ত্রাস-সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যায়নি। যদিও ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (DHS) প্রথমে স্টেট ডিপার্টমেন্টকে রুয়েসার ভিসা বাতিলের অনুরোধ জানিয়েছিল।
কিন্তু স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানায়, সেক্রেটারি অব স্টেট মার্কো রুবিও-র কাছে সেই ধরনের কোনো উপযুক্ত কারণ নেই।
৩০ বছর বয়সী রুয়েসা তুরস্কের নাগরিক। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে এফ-১ স্টুডেন্ট ভিসায় পড়াশোনা করছিলেন।
গত প্রায় তিন সপ্তাহ আগে ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের সোমারভিলে নিজের অ্যাপার্টমেন্টের কাছে সাদা পোশাকের কয়েকজন অফিসার তাকে আটক করে। আটকের সময় তারা নিজেদের পরিচয় দেননি।
রুয়েসার আইনজীবীদের দাবি, ফিলিস্তিনি অধিকারের পক্ষে কথা বলার কারণেই তাকে অন্যায়ভাবে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।
আটকের পর রুয়েসাকে বিভিন্ন রাজ্যে ঘোরানো হয়। এরপর তিনি লুইজিয়ানার সাউথ লুইজিয়ানা আইসিই প্রসেসিং সেন্টারে আসেন, যা তার বাড়ি থেকে ১৫০০ মাইলেরও বেশি দূরে অবস্থিত।
সেখানে তার সঙ্গে হওয়া খারাপ আচরণের কথা তিনি জানিয়েছেন। তার অভিযোগ, সেখানকার পরিবেশ ছিল অস্বাস্থ্যকর, অনিরাপদ এবং অমানবিক।
সোমবারের শুনানিতে রুয়েসার আইনজীবীরা ভারমন্ট জেলা আদালতের বিচারক উইলিয়াম কে সেশনস-এর কাছে আবেদন করেছেন, যেন এই মামলাটি ভার্মন্ট জেলা আদালতে শোনা হয়।
কারণ, লুইজিয়ানায় স্থানান্তরের আগে রুয়েসাকে সবশেষ ভার্মন্টে নেওয়া হয়েছিল। তারা রুয়েসাকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ারও আবেদন করেছেন।
আইনজীবীদের দাবি, রুয়েসা পালিয়ে যাওয়ার মতো কোনো ঝুঁকি নেই এবং তিনি সমাজের জন্য বিপজ্জনকও নন।
আদালতে দাখিল করা এক লিখিত আবেদনে রুয়েসা জানিয়েছেন, তিনি কারাগারে থাকাকালীন অ্যাজমার সমস্যা বেড়ে গিয়েছিল। তার চিকিৎসারও সুযোগ ছিল না।
কর্তৃপক্ষের কাছে ওষুধ চেয়েও পাননি।
এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক ছাত্রসমাজ আতঙ্কে রয়েছে। কারণ, ট্রাম্প প্রশাসন ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভকারী এবং অ্যাক্টিভিস্টদের ওপর কঠোর হচ্ছে।
তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং শহরের রাস্তায় অথবা বাড়ির কাছেই তাদের আটক করা হচ্ছে।
রুয়েসা জানিয়েছেন, আটকের এক সপ্তাহ আগে তিনি তার নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। কারণ, একটি ইসরায়েলিপন্থী ওয়েবসাইটে তাকে সন্ত্রাসী সমর্থক হিসেবে অভিযুক্ত করে তার ছবি ও ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা হয়।
আটকের সময় সাদা পোশাকের কর্মকর্তারা তার কাছে এসে কোনো পরিচয় দেননি। তাদের দেখে রুয়েসা প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন এবং নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবেছিলেন।
আটকের পর রুয়েসাকে একটি এসইউভিতে তোলা হয় এবং কেন তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
রুয়েসা জানান, তিনি তার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও সেই সুযোগ পাননি। এমনকি খাবার ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকেও তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
আটকের সময় রুয়েসা রমজানের রোজা রাখছিলেন। তিনি খাবার চাইলে কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে তাকে কিছু ক্র্যাকার্স ও পানি দেওয়া হয়।
রুয়েসা আশঙ্কা করেছিলেন, হয়তো তাকে বিষ মেশানো খাবার দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে কারাগারে বন্দি রুয়েসা তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছেন না।
তিনি জানান, তার শিক্ষক এবং সহপাঠীদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে না পারায় তিনি হতাশ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন