সুদানের দারফুর অঞ্চলে আবারও সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করেছে। দেশটির আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ) উত্তর দারফুরের একটি প্রধান শরণার্থী শিবির, জামজাম ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, এই হামলায় বহু মানুষ হতাহত হয়েছে এবং সেখানকার বাসিন্দারা জীবন বাঁচাতে দিগ্বিদিক ছুটছে।
জানা গেছে, চার দিন ধরে চলা এই হামলায় ক্যাম্পের আশ্রয়কেন্দ্র, বাজার এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। এই জামজাম ক্যাম্প এবং কাছাকাছি আবু শাউক ক্যাম্পে প্রায় সাত লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। আরএসএফের দাবি, ক্যাম্পটি ভাড়াটে সেনাদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এটি ছিল নারী, শিশু এবং বয়স্কদের মতো দুর্বল বেসামরিক নাগরিকদের ওপর পরিকল্পিত হামলা।
অন্যদিকে, সুদানের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে মিত্রতা রয়েছে এমন একটি মিলিশিয়া, সুদান লিবারেশন আর্মি (এসএলএ) আল-ফাশির শহরের কাছে আরএসএফের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। আল-ফাশির শহরটি উত্তর দারফুর প্রদেশের রাজধানী এবং জামজাম ক্যাম্প থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এসএলএ-এর মুখপাত্র এল-সাদিক আলী এল-নুর জানিয়েছেন, ক্যাম্পের হাজার হাজার বাসিন্দা পায়ে হেঁটে আল-ফাশিরে আশ্রয় নিতে গিয়েছেন, যার ফলে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই অবস্থা। খাবার, জল এবং ঔষধের অভাবে তারা খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন।
এসএলএ জরুরি ভিত্তিতে সুদানের সশস্ত্র বাহিনী ও তাদের মিত্রদের কাছে সামরিক সহায়তা চেয়েছে, যাতে আল-ফাশিরে বসবাসকারী প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষের জীবন বাঁচানো যায়। তাদের মতে, দারফুরকে একা লড়তে দেওয়া উচিত নয়।
আরএসএফ অবশ্য বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা তাদের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ক্যাম্পের মধ্যে অভিনেতা এবং সাজানো দৃশ্য ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ এনেছে। আরএসএফের দাবি, তারা আল-ফাশির এবং আশেপাশের ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসা পরিবারগুলোর জন্য স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে এবং মানবিক সংস্থাগুলোকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, সুদানে সশস্ত্র বাহিনী এবং আরএসএফের মধ্যে ক্ষমতা নিয়ে বিরোধের জেরে গত ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে যুদ্ধ চলছে। এই সংঘর্ষের কারণে ইতিমধ্যে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং দারফুরের মতো অঞ্চলগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে আরএসএফ খার্তুমে সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রার মধ্যে তাদের অবস্থান ধরে রাখার জন্য লড়াই করছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন