সোমবার থেকে সামাজিক নিরাপত্তা বিধির কড়া নিয়ম! সুবিধাভোগীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ?

যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় জালিয়াতি প্রতিরোধের নতুন পদক্ষেপ নিয়ে বিভ্রান্ত সুবিধাভোগীরা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক সুরক্ষা প্রশাসন (Social Security Administration) তাদের সুরক্ষা ব্যবস্থায় জালিয়াতি (fraud) কমাতে নতুন কিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। এই পদক্ষেপগুলি সম্প্রতি ঘোষণা করা হয়েছে এবং এর ফলে সুবিধাভোগীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ ও বিভ্রান্তি।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন থেকে সুবিধা পাওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করলে, আবেদনকারীদের পরিচয় যাচাই করা হবে। এছাড়াও, সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ পাঠানোর (direct deposit) তথ্য পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

সংস্থাটি জানাচ্ছে, এই পদক্ষেপগুলির মূল উদ্দেশ্য হল সুরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলো দূর করে জালিয়াতি কমানো। এই কারণে, এখন থেকে ফোন কলের মাধ্যমে সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য পরিবর্তন করা যাবে না। এই পরিবর্তনের ফলে সুবিধাভোগীদের হয়তো অনলাইনে তাদের ‘মাই সোশ্যাল সিকিউরিটি’ ওয়েবসাইটে যেতে হবে, অথবা সরাসরি অফিসে গিয়ে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করতে হবে।

তবে, এই নতুন নিয়ম নিয়ে এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে জটিলতা। অনেক সুবিধাভোগী, বিশেষ করে যারা প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত নন অথবা সহজে অফিসে যেতে পারেন না, তাদের জন্য এই নিয়মগুলি সমস্যা তৈরি করতে পারে। অনেকেই তাদের মাসিক ভাতা হারানোর আশঙ্কায় দ্রুত স্থানীয় অফিসে যাচ্ছেন।

আবার অনেকে, অফিসের হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে নতুন নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইছেন।

বিষয়টি আরও জটিল হয়েছে কারণ, এই নিয়মগুলো তৈরির পর তা কয়েকবার পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রথমে, প্রশাসন জানিয়েছিল যে, অনলাইনে আবেদন করার প্রক্রিয়া আরও কঠিন করা হবে এবং ফোন কলের মাধ্যমে আবেদন গ্রহণ করা হবে না।

পরবর্তীতে, তারা তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে জানায়, শুধুমাত্র কিছু বিশেষ সুবিধাভোগীর ক্ষেত্রেই এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।

প্রশাসনের এই ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণে কর্মীরাও সঠিক তথ্য দিতে পারছেন না। কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতেও সমস্যা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে, কর্মকর্তাদের অনেকেই জানেন না গ্রাহকদের কী বলবেন।

এই পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বয়স্ক এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা। কারণ, তাঁদের মধ্যে অনেকেই কম্পিউটার ব্যবহার করতে বা অফিসে যেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না।

উদাহরণস্বরূপ, কলোরাডোর বাসিন্দা ৬২ বছর বয়সী কেভিন জোচেমসের কথা বলা যায়। তিনি জানান, এই পরিবর্তনের কারণে তাঁর মাসিক ভাতা পেতে সমস্যা হতে পারে, তাই তিনি অফিসে গিয়ে পরিচয় যাচাই করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে অতিরিক্ত ভিড় থাকার কারণে তাঁকে নিরাপত্তা কর্মীর সঙ্গে কথা বলতে হয়, যিনি জানান, তাঁকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে।

এরপর তিনি হেল্পলাইনে ফোন করেন, কিন্তু সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে তাঁর আর কথা বলা সম্ভব হয়নি।

আরেকজন সুবিধাভোগী ৬৪ বছর বয়সী ম্যাট কুব। তিনি বলেন, “সরকার বলছে, পরিচয় যাচাইয়ের জন্য আমাদের সশরীরে আসতে হবে, অথচ অফিসে ঢুকতে দিচ্ছে না।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক সুরক্ষা হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা যুক্তরাষ্ট্রের বয়স্ক নাগরিক এবং অক্ষম ব্যক্তিদের আর্থিক নিরাপত্তা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে, এই ধরনের পরিবর্তনের ফলে সুবিধাভোগীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হওয়াটা স্বাভাবিক।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *