বাল্টিমোর: নতুন রূপে ফিরছে আমেরিকার এই শহর, বাংলাদেশের জন্য কি শিক্ষণীয়?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর শহরটি যেন এক নতুন দিগন্তের সূচনা করছে। একসময়ের অপরাধ-প্রবণ, অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া এই শহরটি এখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হতে পারে। পুরনো ভবনগুলো সংস্কার করে অত্যাধুনিক হোটেল তৈরি হচ্ছে, রুচিশীল রেস্টুরেন্টগুলো নতুন স্বাদের জন্ম দিচ্ছে, আর ঐতিহ্যবাহী বাজারগুলো ফিরে পাচ্ছে তাদের হারানো জৌলুস।
বাল্টিমোরের এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে একটি দীর্ঘ ইতিহাস। একসময় এটি ছিল একটি সমৃদ্ধ বন্দর নগরী, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে শহরের গুরুত্ব কমে যায়। নব্বইয়ের দশকে এখানকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে, শহরটি অপরাধের আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়। এইচবিও’র জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘দ্য ওয়্যার’-এ এই শহরের সেই কঠিন চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
তবে, সম্প্রতি বাল্টিমোর যেন পুরনো সেই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ‘ল্যাট্রোব বিল্ডিং’-এর কথা ধরুন। একসময় এটি ছিল বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট, পরে এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। কিন্তু বর্তমানে, এটি ‘দ্য ইউলিসিস’ নামের অত্যাশ্চর্য এক হোটেলে পরিণত হয়েছে, যা পুরনো দিনের আভিজাত্যকে ফিরিয়ে এনেছে।
শুধু হোটেল নয়, খাদ্যরসিকদের জন্যেও বাল্টিমোর এখন আকর্ষণীয় গন্তব্য। এখানে গড়ে উঠছে নতুন নতুন রেস্টুরেন্ট, যেখানে স্থানীয় উপাদান দিয়ে তৈরি হচ্ছে মুখরোচক সব খাবার। ‘লিটল ডনাস’ নামের একটি রেস্টুরেন্ট, যেখানে যুগোস্লাভীয় ঐতিহ্যের সাথে স্থানীয় উপাদান মিশিয়ে এক অসাধারণ মেন্যু তৈরি করা হয়েছে। এখানকার ক্র্যাব প্যানকেক, লবস্টার পিরোগি এবং পার্সিমনের পিৎজা—এগুলো বাল্টিমোরের খাদ্য সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
ঐতিহ্যবাহী বাজারগুলোর পুনরুজ্জীবনও বাল্টিমোরের পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আঠারো শতকে প্রতিষ্ঠিত ‘লেক্সিংটন মার্কেট’ আধুনিক রূপে ফিরে এসেছে, যেখানে বিভিন্ন দেশের খাবারের পসরা সাজানো হয়েছে। এছাড়াও, ‘হোলিন্স মার্কেট’-এর মতো পুরনো বাজারগুলোতেও নতুন করে ব্যবসা শুরু হয়েছে। ‘রুটড রোটিসেরি’র মতো রেস্টুরেন্টগুলো স্থানীয়দের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে, যেখানে বিশেষভাবে তৈরি করা খাবার পরিবেশন করা হয়।
বাল্টিমোরের এই পরিবর্তন শুধু একটি শহরের পুনর্গঠন নয়, বরং এটি একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন। পুরনোকে নতুনভাবে সাজিয়ে, স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি মনোযোগ দিয়ে এবং সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে একটি শহর ঘুরে দাঁড়াতে পারে, বাল্টিমোর যেন তারই প্রমাণ। বাংলাদেশের শহরগুলোর জন্যও বাল্টিমোরের এই অভিজ্ঞতা শিক্ষণীয় হতে পারে। বিশেষ করে, পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনা, স্থানীয় বাজারের আধুনিকীকরণ এবং নতুন ব্যবসার সুযোগ তৈরি করার ক্ষেত্রে বাল্টিমোরের এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যেতে পারে।
বাল্টিমোরের এই পরিবর্তনের পেছনে স্থানীয় উদ্যোক্তা, শিল্পী এবং ব্যবসায়ীদের অবদান অনস্বীকার্য। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শহরটি নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। বাল্টিমোরের এই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প, বাংলাদেশের শহরগুলোর জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
তথ্যসূত্র: ট্রাভেল + লেজার