হাজিয়া সোফিয়ার গম্বুজ: ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে! তুরস্কের বড় সিদ্ধান্ত!

ঐতিহাসিক স্থাপনা হাগিয়া সোফিয়ার ভূমিকম্প থেকে সুরক্ষায় সংস্কার কাজ শুরু করেছে তুরস্ক। ইস্তাম্বুলে অবস্থিত এই বিখ্যাত মসজিদের মূল কাঠামো এবং গম্বুজগুলোকে শক্তিশালী করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো এই স্থাপত্যটি শুধু তুরস্কের নয়, বিশ্বজুড়ে ইতিহাস প্রেমীদের কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ।

সংস্কার প্রকল্পের অংশ হিসেবে, হাগিয়া সোফিয়ার প্রধান গম্বুজ এবং অর্ধ-গম্বুজগুলোর কাঠামো মজবুত করা হবে। এছাড়াও, পুরনো এবং ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যাওয়া সীসার আস্তরণ পরিবর্তন করা হবে এবং ইস্পাতের কাঠামোতেও আধুনিকীকরণ করা হবে।

তুরস্কের নির্মাণ প্রকৌশলী এবং মিমার সিনান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মেহমেত সেলিম ওকতেন জানিয়েছেন, এই সংস্কার কাজ চলাকালীন সময়েও মসজিদে নিয়মিত নামাজ চালু থাকবে।

২০২৩ সালে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে ৭.৮ মাত্রার এক ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে, যার ফলে বহু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পঞ্চাশ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। যদিও ইস্তাম্বুল সরাসরি ভূমিকম্পের শিকার হয়নি, তবে শহরটি ফল্ট লাইনের কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায় এখানেও ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে।

এই কারণে হাগিয়া সোফিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার সুরক্ষার বিষয়টি এখন বিশেষভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে।

ড. ওকতেন আরও জানান, এই সংস্কার কার্যক্রম গত দেড়শ বছরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তিনি বলেন, “আমরা এখন একটি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করছি।

মসজিদের পূর্ব দিকের দেয়ালে একটি টাওয়ার ক্রেন স্থাপন করা হবে, যা নির্মাণ সামগ্রী আনা-নেওয়ার কাজে সাহায্য করবে। এরপর আমরা এই অনন্য কাঠামোর উপরিভাগে একটি সুরক্ষামূলক ফ্রেম সিস্টেম তৈরি করব।

এর মাধ্যমে আমরা আরও নিরাপদে কাজ করতে পারব এবং দশম ও চতুর্দশ শতকে আগুন ও ভূমিকম্পের কারণে যে ক্ষতি হয়েছিল, তা বিস্তারিতভাবে পরীক্ষা করতে পারব।

উল্লেখ্য, বাইজেন্টাইন সম্রাট জাস্টিনিয়ান ৫৩৭ খ্রিস্টাব্দে হাগিয়া সোফিয়া নির্মাণ করেন। ১৪৫৩ সালে অটোমান সাম্রাজ্যের ইস্তাম্বুল বিজয়ের পর এটি মসজিদে রূপান্তরিত হয়।

পরবর্তীতে ১৯৩৪ সালে তুরস্কের আধুনিক প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক এটিকে জাদুঘরে পরিণত করেন। তবে, ২০২০ সালে তুরস্কের সর্বোচ্চ আদালত এটিকে পুনরায় মসজিদে রূপান্তরের অনুমতি দেয়।

সংস্কার প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রুপার্ট ওয়েগারিফ বলেন, “হাগিয়া সোফিয়া একটি অসাধারণ স্থান, যা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিস্তম্ভগুলোর মধ্যে অন্যতম।

ভূমিকম্পের ঝুঁকি থেকে এটি রক্ষা করতে এবং এর ঐতিহ্য সংরক্ষণে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ড. ওকতেন আরও জানান, সংস্কার কাজ কবে শেষ হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে, এই পুরো প্রক্রিয়াটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং স্বচ্ছভাবে এর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা যাবে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *