আতঙ্কের জাল! ফেসবুকের ব্ল্যাক মার্কেটে উবার ড্রাইভার অ্যাকাউন্টের কেনাবেচা!

ফেসবুক-এ সক্রিয় থাকা কিছু গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, যেখানে ভাড়ায় চালক এবং ডেলিভারি কর্মীদের অ্যাকাউন্ট কেনা-বেচা চলছে। এই ধরনের বেআইনি ব্যবসার কারণে রাইডশেয়ারিং এবং খাবার সরবরাহ করার প্ল্যাটফর্মগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে গ্রাহকদের নিরাপত্তা চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি অলাভজনক সংস্থা, টেক ট্রান্সপারেন্সি প্রজেক্ট (টিটিপি), এই বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে ফেসবুক-এ প্রায় ৮০টির মতো গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে, যেখানে এই ধরনের অবৈধ লেনদেন নিয়মিতভাবে চলছে।

এইসব গ্রুপে, ব্যবহারকারীরা উবার (Uber), ডোরড্যাশ (DoorDash), এবং যুক্তরাজ্যের ডেলিভারু-এর (Deliveroo) মতো প্ল্যাটফর্মের ড্রাইভার অ্যাকাউন্ট কেনা, ভাড়া করা বা বিক্রি করার প্রস্তাব দেয়।

টিটিপি’র ডিরেক্টর, কেটি পল, এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। বিশেষ করে নারীদের জন্য, উবারের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহারের প্রধান কারণ হলো নিরাপত্তা।

কিন্তু যদি সেখানে এই ধরনের দুর্বলতা থাকে, তাহলে প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের আর কোনো মানে থাকে না।”

জানা গেছে, এই ধরনের অবৈধ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে, ভুয়া ব্যক্তিরা এইসব প্ল্যাটফর্মে চালক বা ডেলিভারি কর্মী হিসাবে কাজ করতে পারে। এর ফলে, রাইডশেয়ারিং-এর মাধ্যমে অচেনা ব্যক্তির গাড়িতে ওঠা বা খাবার অর্ডারের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভবনা থাকে।

মেটা (Meta)-র একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা এই বিষয়ক প্রতিবেদনটি খতিয়ে দেখবে এবং তাদের নিয়ম লঙ্ঘন করে এমন কোনো বিষয় থাকলে, তা সরিয়ে দেওয়া হবে।

সিএনএন-এর পক্ষ থেকে বিষয়টি জানানোর পর, মেটা ইতিমধ্যে তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে কয়েকটি গ্রুপ সরিয়ে দিয়েছে।

ডোরড্যাশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা তাদের নিয়মাবলী কঠোরভাবে কার্যকর করছে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করছে। উবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্ল্যাটফর্মের নিরাপত্তা তাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তারা অ্যাকাউন্ট শেয়ারিংয়ের (Account sharing) অনুমতি দেয় না এবং ব্যবহারকারীর পরিচয় যাচাই করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। সন্দেহজনক কার্যকলাপ ধরা পড়লে, তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করে।

২০১৯ সালে লন্ডনের পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা, নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে উবারকে সাময়িকভাবে তাদের পরিষেবা বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল।

কারণ, তখন জানা গিয়েছিল, কিছু অননুমোদিত চালক অনুমোদিত ড্রাইভারদের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে যাত্রী পরিবহন করছিলেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে, ফেসবুক-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলোকে তাদের নীতি আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে।

টিটিপি-র মতে, মেটা’র উচিত এই ধরনের অবৈধ ব্যবসার বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া। তাদের মতে, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির পাশাপাশি, মানব-পর্যবেক্ষণ আরও বাড়ানো উচিত।

ফেসবুকে ‘উবার অ্যাকাউন্ট ফর রেন্ট ওয়ার্ল্ডওয়াইড’ (UBER ACCOUNT FOR RENT WORLDWIDE)-এর মতো গ্রুপগুলোতে সহজেই চালকদের অ্যাকাউন্ট ভাড়ায় পাওয়া যাচ্ছে।

এইসব গ্রুপে, অ্যাকাউন্ট ভাড়ার জন্য বিভিন্ন অফার দেখা যায় এবং এর দামও উল্লেখ করা হয়।

উদাহরণস্বরূপ, একটি গ্রুপে দেখা গেছে, একজন ব্যক্তি মাসে ৬৫ ডলারে একটি উবার ইটস (Uber Eats) ড্রাইভার অ্যাকাউন্ট ভাড়ায় দিতে চাইছে।

এই পরিস্থিতিতে, রাইডশেয়ারিং এবং ডেলিভারি প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য তাদের ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

ডোরড্যাশ জানিয়েছে, তারা নিয়মিতভাবে ড্রাইভারদের পরিচয় যাচাই করার ব্যবস্থা নিয়েছে। একইসঙ্গে, উবার তাদের ড্রাইভারদের পরিচয় যাচাই করতে এবং জালিয়াতি শনাক্ত করতে বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *