ফিলিস্তিনের বেথলেহেম, যা খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র ভূমি হিসেবে পরিচিত, সেখানকার জলপাই কাঠের কারিগররা এখন এক কঠিন সময় পার করছেন। পর্যটকদের আনাগোনা কমে যাওয়ায় তাদের ব্যবসা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
বিশেষ করে আসন্ন ইস্টার উৎসবেও পর্যটকদের দেখা নেই, যা তাদের উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের কারণে এই অঞ্চলের পর্যটন শিল্পে ধস নেমেছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে স্থানীয় কারুশিল্পের ওপর।
বেথলেহেম শহরটি মূলত পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। এখানকার অর্থনীতির ৭০ শতাংশ আসে পর্যটন থেকে।
ইস্টার এবং বড়দিনের মতো উৎসবগুলোতে এখানে প্রচুর পর্যটকের সমাগম হয়। কিন্তু যুদ্ধের কারণে এখন সেই চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে।
দোকানগুলোতে সাজানো ক্রুশবিদ্ধ যিশুর মূর্তি, ন্যাটভিটির প্রতিকৃতি—এসব তৈরিতে ব্যস্ত কারিগরদের এখন কাজ নেই বললেই চলে।
স্থানীয় কারিগর আত্তাল্লাহ জ্যাকারিয়া জানান, তার ব্যবসার ৭৫ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে। তার পারিবারিক কর্মশালা, যা ১৯৬০ সাল থেকে এখানে চলছে, কর্মী সংখ্যা ২৫ জন থেকে কমিয়ে বর্তমানে ১০ জনে নামিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে।
এখন তিনি সপ্তাহে মাত্র দু’দিন দোকান খোলেন। আগে যেখানে সবসময় কর্মচঞ্চলতা ছিল, সেখানে এখন সুনসান নীরবতা।
শুধু জ্যাকারিয়াই নন, বাসেম জিয়াকামানের মতো আরও অনেক কারিগর এই ক্ষতির শিকার। বাসেমের দোকান ম manger square-এর দিকে।
তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কারণে তাদের ব্যবসা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। ফিলিস্তিনের রপ্তানি পণ্যের ওপর যদি ১৭ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়, তবে ব্যবসার টিকে থাকা কঠিন হবে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিধিনিষেধের কারণে এখানকার অর্থনীতি এমনিতেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। এর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কারণে কারিগরদের টিকে থাকা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জিয়াকামান জানান, তার তৈরি করা একটি কাঠের ক্রুশ যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে পৌঁছেছিল।
কিন্তু এই ধরনের ব্যক্তিগত সম্পর্কের চেয়ে এখানকার ব্যবসায়ীরা এখন তাদের ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি চিন্তিত। তাদের একটাই চাওয়া, এই সংকট থেকে উত্তরণ এবং আগের মতো স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা