ইরান-মার্কিন পারমাণবিক আলোচনা: মস্কোতে যাচ্ছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, রাশিয়াকে পাশে চাইছে তেহরান।
তেহরান এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে ইরান। আগামী সপ্তাহে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান এ বিষয়ে আলোচনার জন্য রাশিয়া যাচ্ছেন।
সোমবার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে, এমন পরিস্থিতিতে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসমাইল বাঘেই এই সফরের বিষয়ে বলেন, ‘আগে থেকেই এই বৈঠকের পরিকল্পনা ছিল, তবে আলোচনার মূল বিষয় হবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান আলোচনা।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা তেহরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক কর্মসূচি তৈরির চেষ্টার অভিযোগ আনে।
তবে ইরান বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে এবং তারা বলছে, তাদের এই কার্যক্রম শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
ইরানের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এবং দেশটির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা জোরদার করা হয়েছে।
ওমানের মধ্যস্থতায় উভয়পক্ষের মধ্যে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে বলেও জানা গেছে। তবে সরাসরি কোনো আলোচনা এখনো হয়নি।
শনিবার আবারও তাদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে এবং ধারণা করা হচ্ছে, এবার আলোচনার স্থান হতে পারে ইতালির রোম।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে রাশিয়া অতীতেও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতেও তারা স্বাক্ষরকারী ছিল।
যদিও পরবর্তীতে ট্রাম্প প্রশাসন সেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে।
ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নতুন করে আলোচনা শুরুর প্রেক্ষাপটে রাশিয়া কূটনৈতিক যোগাযোগের ওপর জোর দিচ্ছে।
মস্কো চাইছে এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হোক, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে না।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লাহিয়ানের সঙ্গে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের বৈঠক হবে।
বৈঠক প্রসঙ্গে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, ‘আমরা ইরানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার অপেক্ষায় আছি।
সের্গেই লাভরভের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও অন্যান্য রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও তাদের বৈঠকের পরিকল্পনা রয়েছে।’
এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোও এই আলোচনার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছে।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোল বারোত বলেছেন, ‘ব্রিটেন ও জার্মানির সঙ্গে মিলে আমরা সতর্ক থাকব, যাতে ইরান ইস্যুতে কোনো আলোচনা আমাদের নিরাপত্তা স্বার্থের পরিপন্থী না হয়।’
অন্যদিকে, জাতিসংঘের পরমাণু বিষয়ক পর্যবেক্ষক সংস্থা আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসিও আগামী বুধবার তেহরান যাওয়ার কথা রয়েছে।
সেখানে তিনি ইরানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
ফেব্রুয়ারিতে আইএইএ-র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের কাছে বর্তমানে প্রায় ২৭৪.৮ কেজি ইউরেনিয়াম মজুত রয়েছে, যা তারা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করেছে।
পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সমৃদ্ধকরণের মাত্রা হলো ৯০ শতাংশ।
আলোচনার পরবর্তী ধাপ শুরুর আগে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র এখনো পর্যন্ত তাদের অবস্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো ইঙ্গিত দেয়নি।
ইরানের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত বৈঠকের স্থান নিশ্চিত করা হয়নি।
তবে সূত্রের খবর অনুযায়ী, রোমে আলোচনা হতে পারে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাঘেই বলেছেন, ওমানের মধ্যস্থতায় আগের আলোচনার মতোই এবারের আলোচনাও পরোক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে।
তার মতে, সরাসরি আলোচনা ফলপ্রসূ হবে না।
আলোচনায় শুধুমাত্র পারমাণবিক ইস্যু এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টিই প্রাধান্য পাবে বলে ইরান জানিয়েছে।
তারা অন্য কোনো বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করবে না বলেও স্পষ্ট করেছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা