কেউ চায়নি! ‘মুরিয়েলস ওয়েডিং’ যেভাবে তৈরি হলো…

অস্ট্রেলীয় চলচ্চিত্র *মুরিয়েল’স ওয়েডিং*: একাকীত্ব থেকে বন্ধুত্বের পথে। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে মুক্তিপ্রাপ্ত অস্ট্রেলীয় চলচ্চিত্র *মুরিয়েল’স ওয়েডিং* আজও দর্শকদের মনে গেঁথে আছে।

পি জে হোগান-এর পরিচালনায় এই ছবিতে এক যুবতী নারীর আত্ম-অনুসন্ধান এবং বন্ধুত্বের গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ছবিটি শুধু একটি বিনোদনমূলক চলচ্চিত্র ছিল না, বরং সমাজের নানা দিক নিয়ে আলোচনার একটি মাধ্যম হিসেবেও কাজ করেছে। সম্প্রতি, ছবিটির পরিচালক এবং অভিনেতা-অভিনেত্রীরা এর নির্মাণ প্রক্রিয়া এবং এর প্রভাব নিয়ে কথা বলেছেন।

পরিচালক পি জে হোগান জানান, ছবিটির মূল ধারণা এসেছিল তাঁর নিজের পরিবার থেকে। তাঁর বোনের বাবার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল বেশ জটিল, যা অনেকটা ছবির গল্পের মতোই। সমাজের চোখে সফল হওয়ার চাপ এবং শিল্পকলার প্রতি আগ্রহ—এই দুইয়ের মধ্যে তৈরি হওয়া দ্বন্দ্বই ছিল ছবির মূল বিষয়।

শুরুতে, নির্মাতারা এমন একটি চরিত্র নিয়ে ছবি বানাতে দ্বিধা বোধ করছিলেন, যে কিনা কিছুটা স্বার্থপর এবং মিথ্যাবাদী। কিন্তু পরিচালক শেষ পর্যন্ত সেই দ্বিধা কাটিয়ে ওঠেন এবং একজন নারীর আত্ম-অনুসন্ধানের গল্প বলার সিদ্ধান্ত নেন।

ছবিতে মুরিয়েলের চরিত্রে অভিনয় করেছেন টনি কোলেট। তাঁর অভিনয় এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, তা দর্শকদের মন জয় করে নেয়। সহ-অভিনেত্রী র‍্যাচেল গ্রিফিথস, যিনি মুরিয়েলের বন্ধু রন্ডার চরিত্রে অভিনয় করেছেন, জানান, এই ছবিতে বন্ধুত্ব এবং পরিবারের গুরুত্ব কতটা, তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

রন্ডার চরিত্রটি এমন একজনের প্রতিচ্ছবি, যে মুরিয়েলের ভেতরের সৌন্দর্য দেখতে পায়, যা অন্যরা দেখতে পায় না।

*মুরিয়েল’স ওয়েডিং* শুধু একটি ভালোবাসার গল্প নয়, বরং এটি সমাজের কিছু কঠিন বাস্তবতাকে তুলে ধরে। ছবিতে এমন কিছু দিক ছিল যা অনেকের কাছেই পরিচিত ছিল, যেমন—পরিবারের চাপ, সমাজের চোখে পিছিয়ে পড়া, এবং নিজের পরিচয় খুঁজে বের করার সংগ্রাম।

এই কারণে ছবিটি মুক্তির পর দ্রুতই দর্শকপ্রিয়তা লাভ করে। এমনকি, ছবিটি এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের কাছেও বিশেষভাবে সমাদৃত হয়েছিল, কারণ এটি তাদের একাকীত্ব এবং সমাজের প্রান্তিক অবস্থানে থাকার অনুভূতিকে গভীরভাবে স্পর্শ করে।

ছবিটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করে। এরপর এটি বিভিন্ন দেশে মুক্তি পায় এবং দর্শকদের মন জয় করে নেয়।

বর্তমানে, *মুরিয়েল’স ওয়েডিং*-এর একটি সঙ্গীতানুষ্ঠানও (musical) তৈরি হয়েছে, যা বিভিন্ন থিয়েটারে প্রদর্শিত হচ্ছে।

*মুরিয়েল’স ওয়েডিং*-এর গল্প আমাদের সমাজের অনেক মানুষের জীবনের প্রতিচ্ছবি। এটি দেখায়, কীভাবে মানুষ প্রতিকূলতা কাটিয়ে ওঠে এবং বন্ধুত্বের মাধ্যমে জীবনের নতুন অর্থ খুঁজে পায়। ছবিটির এই সর্বজনীন আবেদন-ই এটিকে আজও এত প্রাসঙ্গিক করে রেখেছে।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *