মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। এই দুই বৃহৎ অর্থনীতির দেশের মধ্যে শুল্ক আরোপের প্রতিযোগিতা বাড়ছে, যা বাংলাদেশের জন্যও উদ্বেগের কারণ।
বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া পদক্ষেপের জবাবে চীন পাল্টা ব্যবস্থা নিলে তা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে, সেটিই এখন আলোচনার বিষয়।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যেকার বাণিজ্য বিরোধের মূল কারণ হলো বাণিজ্য ঘাটতি। চীন থেকে আমদানি বেশি হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে।
এই ঘাটতি কমাতে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেন, যা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছে।
চীনও এর জবাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করে।
চীনের হাতে থাকা বিশাল পরিমাণ মার্কিন ঋণ, যা ট্রেজারি বন্ড নামে পরিচিত, এই বাণিজ্য যুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মার্কিন ঋণ держаরক দেশ, তাদের হাতে ৭৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি ট্রেজারি বন্ড রয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলারের ব্যবহার বেশি হওয়ায় চীনসহ বিভিন্ন দেশ মার্কিন বন্ডে বিনিয়োগ করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন চাইলে তাদের এই বন্ড বিক্রি করে ডলারের মূল্য কমিয়ে দিতে পারে। এমনটা ঘটলে বিশ্ববাজারে ডলারের দাম কমতে শুরু করবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য খারাপ হতে পারে।
এর ফলে শুধু আমেরিকাই নয়, বিশ্বজুড়ে অনেক দেশের অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
তবে, এমন পদক্ষেপ নিলে চীনেরও ক্ষতি হবে। কারণ, ডলারের দর কমলে চীনের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তাদের রপ্তানি আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে।
তাই, চীন সম্ভবত সহজে এই পথে হাঁটবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ নিতে পারে। তারা বন্ড কিনে বাজারে আরও বেশি ডলার সরবরাহ করতে পারে, যা সুদের হার কমিয়ে অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে উৎসাহিত করতে সহায়তা করবে।
তবে, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারণে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে ভোক্তাদের মধ্যে একটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে ব্যক্তিগত আয় এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে, যা মানুষের মধ্যে ব্যয় সংকোচনের প্রবণতা বাড়াচ্ছে।
বাংলাদেশের জন্য এই পরিস্থিতি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা দেখা দিলে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, বিশেষ করে পোশাক শিল্প, ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ডলারের দাম কমে গেলে আমদানি খরচ বেড়ে যেতে পারে, যা দেশের অর্থনীতিকে আরও চাপে ফেলবে।
তাই, বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা