ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পরমাণু বিষয়ক আলোচনা এবার মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপে সরতে চলেছে। আগামী আলোচনার আসর বসতে চলেছে ইতালির রাজধানী রোমে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, আগামী শনিবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে, ওমানে উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। খবরটি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
এদিকে, জাতিসংঘের পরমাণু বিষয়ক সংস্থা, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ-এর প্রধান রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসিও খুব শীঘ্রই তেহরান সফরে যাবেন। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে তিনি ইরানের পরমাণু কর্মসূচী পরিদর্শনের জন্য তাঁর সংস্থার পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকারের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন।
দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক অর্ধশতকেরও বেশি সময় ধরে বৈরীপূর্ণ। এমন পরিস্থিতিতে আলোচনার গুরুত্ব অপরিসীম। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিকবার ইরানের পরমাণু কর্মসূচীর ওপর বিমান হামলার হুমকি দিয়েছেন।
অন্যদিকে ইরানের কর্মকর্তারাও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, তাঁরা খুব দ্রুতই অস্ত্র তৈরির পর্যায়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারেন। বর্তমানে তাদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণে প্রায় অস্ত্র-গ্রেডের কাছাকাছি ইউরেনিয়াম মজুদ রয়েছে।
ইতালির সরকারি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, আগামী আলোচনার আসর বসতে চলেছে রোমে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সূত্রের বরাত দিয়ে এপি জানিয়েছে, শনিবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি জাপানের ওসাকাতে সাংবাদিকদের জানান, তাঁর সরকার এই আলোচনার আয়োজন করতে রাজি হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা ওমানের কাছ থেকে আলোচনা আয়োজনের অনুরোধ পেয়েছি। আমরা সবসময়ই ইতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারে এমন বৈঠকের আয়োজন করতে প্রস্তুত।”
অন্যদিকে, ডাচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাসপার ভেল্ডক্যাম্পও জানান, আসন্ন আলোচনা রোমে অনুষ্ঠিত হবে। তবে, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত বৈঠকের স্থান নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
ধারণা করা হচ্ছে, প্রথম বৈঠকের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ওমান এবারও দুই পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘেরি সোমবার তেহরানে সাংবাদিকদের বলেন, “পরবর্তী বৈঠক সম্ভবত ওমানের বাইরে অন্য কোনো স্থানে অনুষ্ঠিত হবে। তবে, এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নয়।”
২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী, ইরান তার ইউরেনিয়াম মজুদের পরিমাণ কমিয়ে ৩.৬৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে রাজি হয়েছিল। এই চুক্তির বিনিময়ে ইরানের ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে একতরফাভাবে বের করে আনেন। এরপর থেকে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম বাড়তে থাকে। বর্তমানে তারা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা অস্ত্র তৈরির জন্য খুবই কাছাকাছি একটি পর্যায়।
আলোচনায় নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের বিষয়টি প্রধান বিষয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইরানের অর্থনীতির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে।
তবে, ইরান ঠিক কতটা ছাড় দিতে রাজি হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। ২০১৮ সালের পর থেকে হওয়া আলোচনাগুলো বিবেচনা করলে, ইরান সম্ভবত অন্তত ২০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার দাবি জানাবে। তবে, উভয়পক্ষই এখনো পর্যন্ত আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাঘেরি আরও বলেন, “চুক্তি বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। অতীতে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের ইতিহাস বিবেচনা করলে, নিশ্চয়তার বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
আশা করা যায়, আলোচনা দল এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাজ করবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “যদি নিষেধাজ্ঞার ভাষা, চাপ, হুমকি ও ভীতি প্রদর্শনের ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলে সরাসরি আলোচনা সম্ভব হবে না।”
এর আগে, ওমানের মধ্যস্থতায় দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে পরোক্ষ আলোচনার পর মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে ইরানের কর্মকর্তাদের মুখোমুখি বৈঠক হয়। ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানান, তিনি উইটকফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং তাঁর দূত মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে ‘খুব ভালো আলোচনা’ করেছেন।
ট্রাম্প আরও বলেন, “আমরা খুব দ্রুতই ইরানের বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেব।”
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস