আতঙ্কের সূচনা: ক্ষমতা হারানোর পর বিদ্রোহের অভিযোগে বিচার মুখোমুখি কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট!

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ইয়ুন সুক-ইওলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগের বিচার শুরু হয়েছে।

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সামরিক শাসন জারির অভিযোগে অভিযুক্ত ইয়ুন, বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। এই ঘটনার জেরে দেশটির রাজনীতিতে এখন চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। সোমবার (২ ডিসেম্বর) সিউলের একটি আদালতে এই মামলার শুনানি শুরু হয়। খবর পরিবেশন করেছে সংবাদ সংস্থা এপি।

সামরিক শাসন জারির সিদ্ধান্তের কারণে ইয়ুনকে অভিশংসন করা হয়েছিল।

বিদ্রোহের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে, এমনকি সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডেরও সম্ভাবনা রয়েছে। আদালত সূত্রে জানা গেছে, এই বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে দুই থেকে তিন বছর সময় লাগতে পারে।

ইয়ুন সুক-ইওলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর সামরিক আইন জারি করেন এবং সেনাবাহিনীর সদস্যদের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ও নির্বাচন কমিশনের অফিসে পাঠান। আইনজীবীরা বলছেন, ইয়ুনের এই পদক্ষেপ ছিল মূলত ওই দুটি প্রতিষ্ঠানকে অচল করে দেওয়ার একটি অপচেষ্টা। যদিও ইয়ুন তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তাঁর দাবি, তিনি দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করেছিলেন।

আদালতে শুনানিতে ইয়ুন বলেন, বিরোধী দল তাঁর এজেন্ডা বানচাল করার চেষ্টা করছিল।

তাই জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্যই তিনি এমন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ইয়ুন আরও জানান, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি তাঁর সামরিক আইন বাতিলের প্রস্তাব গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তা মেনে নিয়েছিলেন।

তবে সামরিক বাহিনীর কিছু কর্মকর্তার বক্তব্য হলো, ইয়ুন নাকি তাঁদের আইনপ্রণেতাদের সংসদ থেকে বের করে আনতে নির্দেশ দিয়েছিলেন, যাতে তাঁরা তাঁর ডিক্রির বিরুদ্ধে ভোট দিতে না পারেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইয়ুনের বিরুদ্ধে আনা বিদ্রোহের অভিযোগটি বেশ বিতর্কিত। কারণ, তাঁর সামরিক আইনের কারণে বড় ধরনের কোনো সহিংসতা হয়নি বা কোনো বেসামরিক নাগরিক হতাহত হননি।

তবে, ইয়ুনের এই পদক্ষেপ দেশের সাংবিধানিক কাঠামোর প্রতি চরম অবজ্ঞা ছিল বলে মনে করেন অনেকে।

ইয়ুনকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পর দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন করে নির্বাচনের ঘোষণা করা হয়।

আগামী ৩ জুন তাঁর উত্তরসূরি নির্বাচনের কথা রয়েছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, ইয়ুন তাঁর দলের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর মনোনয়নে প্রভাব ফেলতে পারেন। সেক্ষেত্রে তিনি এমন কাউকে বেছে নিতে পারেন, যিনি তাঁর হয়ে কথা বলবেন এবং দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁকে ক্ষমা করতে পারেন।

এদিকে, ইয়ুন বর্তমানে বিচারের মুখোমুখি হওয়ায় রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পাওয়া তাঁর আইনি সুরক্ষা আর নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইয়ুনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সামরিক আইন জারির সঙ্গে জড়িত অন্যান্য অপরাধের অভিযোগ আনা হতে পারে। আইনজীবীরা বলছেন, মামলার সাক্ষীদের জেরা ও নথিপত্র পরীক্ষার জন্য এক থেকে দুই বছর সময় লাগতে পারে। তবে তাঁরা আশা করছেন, দ্রুতই এই মামলার নিষ্পত্তি হবে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *