চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরে গিয়ে বাণিজ্য যুদ্ধের কোনো জয়ী নেই বলে মন্তব্য করেছেন। ভিয়েতনামে তাঁর এই সফরকালে তিনি চীনকে একটি স্থিতিশীল শক্তি হিসেবে তুলে ধরেন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতির বিপরীতে একটি ভিন্ন চিত্র।
খবর অনুযায়ী, এই সফরটি এমন সময়ে হচ্ছে যখন যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে।
শি জিনপিং এবং ভিয়েতনামের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাণিজ্য, সরবরাহ শৃঙ্খল উন্নয়ন এবং পরিবেশ সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে একটি ৮ বিলিয়ন ডলারের রেলওয়ে প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে সংযোগ আরও দৃঢ় করবে।
এই সফরের মাধ্যমে চীন এই অঞ্চলে তার প্রভাব আরও বাড়াতে চাইছে। বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে চীন তার মিত্রদের আরও কাছে টানতে চাইছে।
ভিয়েতনাম এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে, কারণ দেশটি একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালে ভিয়েতনাম একই সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং উভয়কেই স্বাগত জানিয়েছে।
এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রকে তারা তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত করেছে, যা চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পর্কের সমতুল্য।
বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ভিয়েতনাম চীনের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরদার করেছে। চীনের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে চীন ও ভিয়েতনামের মধ্যে বাণিজ্য প্রায় ১৪.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে ভিয়েতনামও কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, ভিয়েতনাম চীনের পণ্যের জন্য একটি ‘ব্যাকডোর’ হিসেবে কাজ করছে, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ভিয়েতনামের উপরও শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
চীন ও ভিয়েতনামের মধ্যে দীর্ঘদিনের কিছু অমীমাংসিত বিষয়ও রয়েছে, বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে তাদের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ বিদ্যমান।
এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তারের কারণে ভিয়েতনামকে সতর্ক থাকতে হচ্ছে। ভিয়েতনামের পর শি জিনপিং মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়াতেও সফর করবেন বলে জানা গেছে।
এই সফরটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে চীনের গুরুত্বের একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন শুল্ক নীতির কারণে এই অঞ্চলের দেশগুলো তাদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে কিছু জটিলতার সম্মুখীন হতে পারে।
চীন এই অঞ্চলে তার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব আরও বাড়াতে চাইছে, যা এই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে আরও গভীর করবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস