সুমিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা: ট্রাম্পের ‘ভুল’ স্বীকার, যুদ্ধের গতি কি বদলাবে?

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং শান্তি আলোচনা নিয়ে মন্তব্য করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি সম্প্রতি সুমি শহরে হওয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে ‘ভুল’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই মন্তব্যের মধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধের পরিকল্পনারই প্রতিফলন দেখা যায়।

শনিবার ইউক্রেনের সুমি শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সাধারণ মানুষ হতাহত হয়। অভিযোগ রয়েছে, রাশিয়া ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করেছে, যা হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়িয়ে দেয়।

ট্রাম্প এই ঘটনাকে ‘ভয়ংকর’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘আমাকে বলা হয়েছে, তারা (রাশিয়া) ভুল করেছে।’

তবে সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো অত্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে আঘাত হানতে সক্ষম। তাই দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার অর্থ হলো, এটি সুপরিকল্পিত এবং এর পেছনে খারাপ উদ্দেশ্য ছিল।

যুদ্ধ পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, কিয়েভকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে রাশিয়া ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে হামলা চালাচ্ছে। সুমি শহরও রাশিয়ার আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু।

পুতিন এই শহরের আশেপাশে একটি বাফার জোন তৈরি করতে চান।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে সমর্থন জানিয়ে আসছে এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে কূটনৈতিক চাপ অব্যাহত রেখেছে। তবে শান্তি আলোচনা এখনো পর্যন্ত কোনো ফল বয়ে আনেনি।

ট্রাম্প সম্প্রতি এক সামাজিক মাধ্যমে রাশিয়াকে ‘এগিয়ে যাওয়ার’ কথা বললেও, এর জন্য কোনো সময়সীমা বেঁধে দেননি অথবা কোনো কঠোর পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেননি।

বর্তমানে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একাধিক প্রতিনিধিদল রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

এর মধ্যে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উপদেষ্টা স্টিভ উইটকফ নিয়মিতভাবে রাশিয়া সফর করছেন।

আবার, উচ্চ পর্যায়ের মার্কিন ও রুশ কূটনীতিকরা সৌদি আরবে বৈঠক করছেন। অন্যদিকে, তুরস্কসহ বিভিন্ন স্থানে নিচু পর্যায়ের বৈঠকেও কূটনৈতিক আলোচনা চলছে।

তবে, এসব আলোচনার মধ্যে রাশিয়া সময়ক্ষেপণ করছে বলে মনে করেন অনেকে। তাদের মতে, রাশিয়া আলোচনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরাতে চাইছে এবং একইসঙ্গে ইউক্রেনে তাদের সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখছে।

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সেখানকার পরিস্থিতি দিন দিন আরও কঠিন হয়ে উঠছে। পশ্চিমা দেশগুলো আশঙ্কা করছে, ইউক্রেন যদি দুর্বল হয়ে যায়, তাহলে তাদের সেনারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধে টিকতে পারবে না।

এমন পরিস্থিতিতে তারা কিভাবে ইউক্রেনকে সাহায্য করতে পারে, সে বিষয়েও আলোচনা চলছে। ব্রিটেন ও ফ্রান্সসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ একটি ‘পুনর্গঠন বাহিনী’ তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে, যারা যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে সহায়তা করবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্ভবত এই যুদ্ধে জয়ী হতে চাইছেন। কারণ, তিনি জানেন, ট্রাম্প সহজে প্রভাবিত হন এবং দ্রুত একটি সমাধানে আসতে চান।

তাই পুতিন আলোচনার মাধ্যমে সময়ক্ষেপণ করছেন, যাতে তিনি ইউক্রেনে সামরিকভাবে আরও সুবিধা করতে পারেন।

ট্রাম্প সম্প্রতি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আপনাকে হয় কিছু করতে হবে, না হয় চুপ থাকতে হবে।’

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প ও ক্রেমলিন—উভয়েই আলোচনা চালিয়ে যেতে আগ্রহী। কিন্তু কেউই কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিতে রাজি নয়।

ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে চান না, আর রাশিয়াও যুদ্ধ বন্ধ করতে চাইছে না।

ট্রাম্পের এমন মনোভাবের কারণে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *