ডজনের বেশি সন্তানের বাবা: শুক্রাণু দানের নামে ডাচদের কীর্তি! তোলপাড়!

শিরোনাম: নেদারল্যান্ডসে শুক্রাণু দানের নিয়ম ভাঙা, বহু ডোনরের মাধ্যমে কয়েক হাজার সন্তানের জন্ম

নেদারল্যান্ডসে শুক্রাণু দানের ক্ষেত্রে বিধিভঙ্গের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। দেশটির ফার্টিলিটি ক্লিনিকগুলি কয়েক দশক ধরে শুক্রাণু দান সংক্রান্ত নিয়মকানুন ভেঙেছে।

এর ফলস্বরূপ, অনেক ডোনর (শুক্রাণু দাতা) ২৫ জনের বেশি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, যা উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনার জেরে ডাচ স্বাস্থ্যখাতে বড় ধরনের আলোড়ন তৈরি হয়েছে।

ডাচ স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা সংগঠন (NVOG) এর মতে, অনেক ক্লিনিকে নিয়ম ভেঙে একই শুক্রাণু একাধিকবার ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি, কিছু ক্ষেত্রে, ডোনারদের অজান্তে অন্য শুক্রাণু ব্যবহার করারও অভিযোগ উঠেছে।

১৯৯২ সাল থেকে নিয়ম ছিল যে কোনো ডোনার সর্বোচ্চ ২৫ জন সন্তানের জন্ম দিতে পারবেন। তবে, কঠোর গোপনীয়তার কারণে এই নিয়ম কার্যকর করা কঠিন ছিল।

২০১৮ সালে এই সংখ্যা কমিয়ে ১২ করা হলেও, একটি জাতীয় নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করা হয় সম্প্রতি, যা এই ধরনের অনিয়ম চিহ্নিত করতে সহায়তা করেছে। এপ্রিল মাস থেকে এই নতুন ব্যবস্থা কার্যকর হওয়ার পরেই আসল চিত্রটা সামনে আসে।

এই নিবন্ধনের মাধ্যমে জানা গেছে, অন্তত ৮৫ জন ডোনার ২৫ জনের বেশি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেরই সন্তান সংখ্যা ৪০ এর কাছাকাছি, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে তা আরও বেশি।

এমনকি, কয়েকজনের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা পৌঁছেছে ৫০ থেকে ৭৫-এর মধ্যে। জানা গেছে, এর মধ্যে অন্তত ১০ জন ফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞও রয়েছেন।

এদের মধ্যে ডা. জন কারবাট নামের একজন চিকিৎসক অন্তত ৮১ জন সন্তানের অবৈধ পিতা।

এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম হলেন জোনাথন জ্যাকব মেইজার। তিনি বিশ্বজুড়ে অন্তত ৫৫০ জন সন্তানের পিতা।

এর মধ্যে ১০০ জনের বেশি সন্তানের জন্ম হয়েছে ডাচ ক্লিনিকে। এই ঘটনার জেরে নেদারল্যান্ডসে বসবাসকারী প্রায় ৩,০০০ জন এমন ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গেছে, যাদের ২৫ জনের বেশি ভাইবোন রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে, স্টিখটিং ডোনোরকিন্ড নামক একটি ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, এই ঘটনা চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য একটি ‘বিপর্যয়’। এর ফলে, ভবিষ্যতে শিশুদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা ইনসেস্ট বা স্বজন-বিবাহের মতো গুরুতর সমস্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে।

এছাড়া, এর কারণে মানুষের মধ্যে চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারানোরও আশঙ্কা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নেদারল্যান্ডসের মতো জনবহুল দেশে এই ধরনের ঘটনা আরো জটিলতা তৈরি করতে পারে। কারণ, এখানে একই এলাকার মানুষের মধ্যে ডেটিং এবং সম্পর্কের সম্ভাবনা অনেক বেশি।

এমন পরিস্থিতিতে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে সম্পর্কের গভীরতা যাচাই করা অপরিহার্য হয়ে উঠবে।

বর্তমানে, ডাচ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি খতিয়ে দেখছে এবং এমপিদের কাছে বিস্তারিত তথ্য পেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

NVOG এর পক্ষ থেকে মা, ডোনার এবং শিশুদের তাদের স্থানীয় ফার্টিলিটি ক্লিনিকের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *