উত্তর মেরুতে নাৎসিদের গোপন ঘাঁটি! কৌতূহল জাগানো এক রহস্য

আর্কটিকের এক দুর্গম প্রান্তে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক বিস্মৃত অধ্যায়

উত্তরের বরফাবৃত প্রান্ত, সুমেরু অঞ্চলের কাছাকাছি অবস্থিত স্বালবার্ড দ্বীপপুঞ্জ, পৃথিবীর অন্যতম দুর্গম স্থান হিসেবে পরিচিত। এখানে একসময় মানুষের বসবাস ছিল না বললেই চলে। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই নির্জনতাই যেন এর গুরুত্ব বাড়িয়ে তোলে।

জার্মানির নাৎসি বাহিনী এখানে গড়ে তুলেছিল গোপন সামরিক ঘাঁটি, যার সাংকেতিক নাম ছিল ‘নাসবাম’।

যুদ্ধকালীন সময়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবহাওয়ার তথ্যের ওপর নির্ভর করে বিমান ও নৌবাহিনীর অভিযানগুলো পরিচালনা করা হতো। ইউরোপে যুদ্ধের আবহাওয়া কেমন থাকবে, তা জানার জন্য এই অঞ্চলের আবহাওয়া স্টেশনগুলোর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।

নাৎসি বাহিনী এই সুযোগটি কাজে লাগাতে চেয়েছিল। তারা এখানে আবহাওয়া কেন্দ্র স্থাপন করে মিত্রশক্তির কার্যক্রমের ওপর নজর রাখত।

১৯৪১ সালে মিত্রশক্তি জানতে পারে যে স্বালবার্ড থেকে পাঠানো তাদের আবহাওয়ার গোপন বার্তা জার্মানরা ধরে ফেলছে এবং তা নিজেদের কাজে ব্যবহার করছে। এর প্রতিকার হিসেবে ব্রিটিশ, রুশ ও নরওয়েজিয়ান কর্তৃপক্ষ দ্বীপপুঞ্জ থেকে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়।

এরপর মিত্রশক্তি দ্বীপের কয়লাখনি ও আবহাওয়া কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করার জন্য ‘অপারেশন গন্টলেট’ চালায়।

জার্মান বাহিনীও বসে ছিল না। তারাও দ্রুত সেখানে তাদের আবহাওয়া কেন্দ্র স্থাপন করে। এর মধ্যে ‘নাসবাম’ ছিল অন্যতম।

১৯৪২ সালে নরওয়েজিয়ান বাহিনী দ্বীপটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে, কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়। তাদের দুটি জাহাজ— ‘আইসবজর্ন’ ও ‘সেলিস’-এর ওপর জার্মান বিমান হামলায় ১৩ জন নরওয়েজিয়ান নিহত হন।

যুদ্ধ চলতে থাকে এবং দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষ হয়। জার্মানির ‘টির্পিৎজ’ নামের একটি যুদ্ধজাহাজও এখানে আক্রমণ চালায়। তবে দীর্ঘকাল তারা দ্বীপটি ধরে রাখতে পারেনি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, ‘নাসবাম’-এর ধ্বংসাবশেষ কালের সাক্ষী হয়ে আজও সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। বর্তমানে সেখানে আসা পর্যটকদের জন্য এটি এক যুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন।

বর্তমানে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আর্কটিক অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করেছে। ফলে এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বও বাড়ছে। বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, এবং ইউরোপীয় দেশগুলো এখানে তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে।

স্বালবার্ড দ্বীপপুঞ্জ একসময় ছিল কোনো দেশের অধিকারভুক্ত নয় এমন একটি স্থান। বর্তমানে এখানে বিভিন্ন দেশের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা চলছে। এই পরিস্থিতিতে, অতীতের যুদ্ধক্ষেত্রটি ভবিষ্যতে আবার কোনো সংঘাতের কারণ হয় কিনা, সে বিষয়ে আশঙ্কা থেকেই যায়।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *