আসলে কি ফিরে এল ভয়ঙ্কর নেকড়ে? আসল নেকড়ের থেকে এদের পার্থক্য!

বরফের যুগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এক ভয়ঙ্কর নেকড়ে: ডিয়ার উলফ-এর পুনর্জন্ম?

লক্ষ্য করুন, কয়েক বছর আগেও মানুষের কল্পনার জগৎ-এ বিচরণ করা এক প্রাণী বাস্তবে ফিরে আসার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি, একটি মার্কিন কোম্পানি, কলোসাল বায়োসায়েন্সেস (Colossal Biosciences), ঘোষণা করেছে তারা ডিয়ার উলফ (Dire Wolf) –এর ডিএনএ-র সাহায্যে এই বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতিটিকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে।

তবে, এই কাজটি কি সত্যিই সম্ভব? ডিয়ার উলফ-রা কি আবার আগের রূপে ফিরে আসবে?

প্রায় ১৩,০০০ বছর আগে উত্তর আমেরিকা থেকে হারিয়ে গিয়েছিল এই বিশাল আকারের নেকড়ের দল। তারা ছিল এক সময়ের ভয়ঙ্কর শিকারি, যাদের প্রধান খাদ্য ছিল বিশাল আকৃতির তৃণভোজী প্রাণী, যেমন – ম্যামথ এবং অন্যান্য বৃহৎ আকারের প্রাণী।

কলোসাল বায়োসায়েন্সেস-এর বিজ্ঞানীরা বলছেন, তারা জেনেটিক এডিটিং-এর মাধ্যমে ডিয়ার উলফ-এর ক্লোন তৈরি করেছেন। এই উদ্দেশ্যে তারা আধুনিক গ্রে উলফ (Gray Wolf)-এর জিন-এ কিছু পরিবর্তন এনেছেন। তাদের তৈরি করা তিনটি ক্লোনের নাম দেওয়া হয়েছে – রোমুলাস, রেমাস এবং খলিসি।

আসলে, ডিয়ার উলফ-রা ছিল সাধারণ নেকড়েদের থেকে বেশ আলাদা। এদের খুলির গঠন ছিল স্বতন্ত্র, চোয়ালের পেশিগুলোও ছিল শক্তিশালী, যা তাদের আরও শক্তিশালী কামড় বসাতে সাহায্য করত।

ক্যালিফোর্নিয়ার লা ব্রেয়া টার পিটস-এর (La Brea Tar Pits) জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা ডিয়ার উলফ সম্পর্কে অনেক তথ্য পেয়েছেন। সেখানে হাজার হাজার ডিয়ার উলফের কঙ্কাল পাওয়া গেছে, যা তাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে ধারণা দেয়।

ডিয়ার উলফ-রা প্রায় ২ লক্ষ বছর ধরে উত্তর আমেরিকায় বিচরণ করত। তারা বিভিন্ন পরিবেশে বাস করত, যেমন – ঠান্ডা তৃণভূমি থেকে শুরু করে ঝোপঝাড়পূর্ণ বনভূমি পর্যন্ত।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এদের বিচরণক্ষেত্র ছিল বিশাল। মিসৌরির ওজার্কস-এর গুহাগুলোতে এদের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। এছাড়া, তারা বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর সঙ্গে একত্রে বসবাস করত।

ডিয়ার উলফ-এর ডিএনএ বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, তারা আধুনিক গ্রে উলফ-দের সরাসরি পূর্বপুরুষ ছিল না। বরং, প্রায় ৫০ লক্ষ বছর আগে, তারা একটি আলাদা বংশ থেকে এসেছে, যা আফ্রিকান শিয়াল-এর কাছাকাছি ছিল।

এই প্রাগৈতিহাসিক নেকড়ের দল ধীরে ধীরে আকারে বৃদ্ধি পায় এবং তাদের মধ্যে কিছু বৈশিষ্ট্য গ্রে উলফ-দের মতোই ছিল।

ডিয়ার উলফ-দের বিলুপ্তির কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। তবে, ধারণা করা হয়, তাদের প্রধান শিকার, যেমন – বিশাল আকারের তৃণভোজী প্রাণীগুলো যখন বিলুপ্ত হয়ে যায়, তখন খাদ্যের অভাবে তারাও ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়।

এছাড়াও, জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানুষের আগমনও তাদের বিলুপ্তির কারণ হতে পারে।

ডিয়ার উলফ-দের পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা একদিকে যেমন বৈজ্ঞানিক কৌতূহলকে জাগিয়ে তোলে, তেমনি এর সঙ্গে কিছু নৈতিক প্রশ্নও জড়িত।

পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডিয়ার উলফ-দের ফিরিয়ে আনা হলে তা পরিবেশের ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এই ধরনের গবেষণা ভবিষ্যতে আমাদের বিলুপ্তপ্রায় অন্যান্য প্রজাতিকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *