বদমেজাজী স্বভাব: নিজেকে বদলানো কি কঠিন? জানতে চান?

জীবনে আমরা সবাই নিজেদের ব্যক্তিত্ব নিয়ে অনেক কথা বলি, অনেক সময় নিজেদের ভালো বা খারাপ স্বভাব নিয়ে আক্ষেপ করি। কারো হয়তো সহজে মিশতে সমস্যা হয়, কারো বা সবকিছুতে খুঁতখুঁত করার প্রবণতা থাকে।

এমন অনেক কিছুই আছে যা আমাদের ব্যক্তিত্বের অংশ। কিন্তু বিজ্ঞান কি বলে? আমরা কি চাইলেই আমাদের ব্যক্তিত্ব পরিবর্তন করতে পারি?

সম্প্রতি, এই বিষয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে ব্যক্তিত্বের পাঁচটি প্রধান বৈশিষ্ট্য – ‘ওপেননেস’, ‘কনসায়েন্সিয়াসনেস’, ‘এক্সট্রাভার্সন’, ‘এগ্রিয়েবুলনেস’ এবং ‘নিউরোটিসিজম’-এর ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। এই পাঁচটি বৈশিষ্ট্যকে সংক্ষেপে ‘ওশেন’ (OCEAN) নামেও ডাকা হয়।

এখানে বিশেষভাবে আলোচনা করা হয়েছে ‘এগ্রিয়েবুলনেস’ বা ‘সহজ-সরল’ স্বভাবের গুরুত্ব নিয়ে। যারা ‘এগ্রিয়েবুল’ প্রকৃতির, তারা সাধারণত অন্যদের সঙ্গে সহজে মিশতে পারে, সহানুভূতিশীল হয় এবং সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখতে দক্ষ হয়।

তাহলে, যাদের মধ্যে এই ‘এগ্রিয়েবুলনেস’-এর অভাব রয়েছে, তারা কি হতাশ হয়ে পড়বে? একদমই না। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, চেষ্টা করলে ব্যক্তিত্বের এই দিকটি পরিবর্তন করা সম্ভব।

এই পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন আত্ম-সচেতনতা এবং ইচ্ছাশক্তি। অর্থাৎ, নিজের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করতে পারা এবং সেগুলো পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করাটা জরুরি।

যুক্তরাষ্ট্রের একজন সাংবাদিক, যিনি দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয়ে গবেষণা করেছেন, তিনি একটি বিশেষ পরীক্ষা করেছেন। তিনি তার নিজের ব্যক্তিত্ব পরিবর্তনের জন্য এক বছর ধরে চেষ্টা করেছেন।

তিনি দেখেছেন, মানুষের আচরণ পরিবর্তন করা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, তিনি নিজের ‘এক্সট্রাভার্সন’ বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন এবং নতুন বন্ধু তৈরি করেছেন।

এই পরিবর্তনের জন্য দুটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে যে আপনি পরিবর্তন হতে পারবেন। দ্বিতীয়ত, নতুন আচরণের সঙ্গে অভ্যস্ত হতে হবে।

প্রথম দিকে হয়তো কাজটি কঠিন মনে হবে, কিন্তু ধীরে ধীরে এটি সহজ হয়ে আসবে।

তবে মনে রাখতে হবে, ব্যক্তিত্ব পরিবর্তনের অর্থ এই নয় যে, আপনি আপনার আসল সত্তা হারাবেন। বরং, এটি হলো নিজের দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার একটি প্রক্রিয়া।

কারো যদি সবকিছুতে খুঁতখুঁত করার স্বভাব থাকে, তবে তিনি চেষ্টা করতে পারেন অন্যদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে, তাদের ভালো দিকগুলো খুঁজে বের করতে।

ব্যক্তিত্ব পরিবর্তনের ফলে আমাদের সম্পর্কগুলো আরও সুন্দর হতে পারে, আমরা আরও সুখী হতে পারি এবং জীবনের মান উন্নত করতে পারি।

তাই, নিজের ভালো থাকার জন্য হলেও, ব্যক্তিত্বের ইতিবাচক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা যেতে পারে।

তথ্যসূত্র: আন্তর্জাতিক গবেষণা ও বিশ্লেষণ থেকে সংগৃহীত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *