ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার লক্ষ্যে দেশটির উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত অন্য কোনো দেশে সরানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার সম্ভাবনা রয়েছে। ওমানের রাজধানী মাস্কাটে হওয়া এক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যেখানে ইরানের প্রতিনিধি এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ-এর মধ্যে আলোচনা হয়।
ধারণা করা হচ্ছে, তেহরান এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করবে।
যুক্তরাষ্ট্র চাইছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশটির ইউরেনিয়াম মজুত অন্য কোনো দেশে, যেমন— রাশিয়ায় সরিয়ে নেওয়া হোক। তবে ইরানের যুক্তি হলো, তাদের এই ইউরেনিয়াম মজুত জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা—আইএইএ-এর তত্ত্বাবধানে তাদের দেশেই রাখা উচিত।
ইরানের কর্মকর্তারা মনে করেন, এটি তাদের জন্য একটা সুরক্ষার মতো। কারণ, ভবিষ্যতে যদি কোনো মার্কিন প্রশাসন এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়, তাহলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
যেমনটা ২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প করেছিলেন, যখন তিনি ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি বাতিল করেন।
ইরান মনে করে, যদি তাদের ইউরেনিয়াম অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে আসে, তাহলে তাদের আবার নতুন করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করতে হবে, যা তাদের জন্য একটা শাস্তি স্বরূপ হবে।
ওমানে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা মূলত মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করা ওমানের মাধ্যমে চললেও, উইটকফ এবং ইরানের প্রতিনিধিদের মধ্যে সরাসরি বৈঠকও হয়েছে।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি আগামী শনিবার রোমে পরবর্তী আলোচনার আয়োজন করতে রাজি হয়েছেন। এটিকে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে ইতালির প্রতি একটি রাজনৈতিক ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
একইসঙ্গে, এই পদক্ষেপ ইরান আলোচনার ক্ষেত্রে প্রধান ইউরোপীয় শক্তিগুলোকে এক প্রকার পাশ কাটিয়ে যাওয়ারও ইঙ্গিত দেয়।
২০১৫ সালের পরমাণু আলোচনার সময় ইতালিকে এই প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হয়েছিল। সে সময় ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্য—এই তিনটি দেশ (ই-থ্রি) ইউরোপীয় স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করেছিল।
ফরেইন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মোহাম্মদ আমেরসি বলেন, “মেলোনি একটি আকর্ষণীয় পছন্দ, কারণ তিনি মনে হয় ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক রাখেন, যা ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যের থেকে বেশি।”
বর্তমানে ইরানের অর্থনীতির অবস্থা ভালো না হওয়ায়, দেশটির কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার মাধ্যমে সরাসরি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে আগ্রহী। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরও খারাপ হলে, বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার জন্য সম্ভাব্য বীমা বিকল্প নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।
ইরানের আঞ্চলিক প্রভাব নিয়েও আলোচনা চলছে।
তবে, ট্রাম্প প্রশাসন আলোচনার বিষয় থেকে তেহরানের ‘অস্থিতিশীল আঞ্চলিক আচরণ’ সম্পর্কিত বিষয়গুলো বাদ দিয়েছেন। ইরান মনে করে, ইসরায়েল সিরিয়া, লেবানন এবং ফিলিস্তিনে ভূমি দখল করছে।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতন, গাজায় হামাসের ওপর ইসরায়েলের আক্রমণ এবং লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের কারণে এই অঞ্চলে ইরানের প্রভাব কমেছে।
এছাড়াও, ইরানের তেল রপ্তানিও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার চাপে রয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান