ট্রাম্পের বিস্ফোরক মন্তব্য: চীন-ভিয়েতনাম বৈঠক, যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’!

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর ভিয়েতনাম সফর নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে চলছে আলোচনা।

এই সফরে চীন ও ভিয়েতনামের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরদার করার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতে, এই সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রকে ‘কাজে লাগানো’।

সোমবার হ্যানয়ে পৌঁছান শি জিনপিং। সেখানে তিনি ভিয়েতনামের শীর্ষ নেতা তো ল্যামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারের আহ্বান জানান।

এছাড়াও, সরবরাহ শৃঙ্খল উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

সাদা বাড়ি থেকে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ভিয়েতনামের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি করার কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

যদিও তিনি এর জন্য চীন বা ভিয়েতনামকে দোষারোপ করেন না। ট্রাম্পের মতে, বাণিজ্য যুদ্ধে কারও জয় হয় না।

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনাম অন্যতম।

দেশটির ওপর ৪৬ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ভিয়েতনাম একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ও উৎপাদন কেন্দ্র, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান রপ্তানি বাজার।

জুতা, পোশাক ও ইলেকট্রনিক সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্যের জন্য দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল।

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বেইজিং থেকে হ্যানয় প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যেখানে ওয়াশিংটনে দেশটির রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩১৪ কোটি ডলার।

মঙ্গলবার, চীনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা, যিনি হংকংয়ের বিষয়গুলো দেখাশোনা করেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতির সমালোচনা করেছেন।

তিনি এক ভাষণে এই বাণিজ্য বিরোধকে ‘অত্যন্ত নির্লজ্জ’ হিসেবে অভিহিত করেন এবং এর লক্ষ্য হিসাবে ‘হংকংয়ের জীবন কেড়ে নেয়া’র কথা উল্লেখ করেন।

হংকংয়ের উপরও চীনের মূল ভূখণ্ডের মতোই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

শি জিনপিংয়ের এই সফর এমন সময়ে হচ্ছে, যখন বেইজিং ১৪৫ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি এবং অন্যান্য দেশগুলো তাদের শুল্ক কমানোর জন্য আলোচনা করতে চাইছে।

হ্যানয়ে শি জিনপিংয়ের এই সফর চীনের জন্য একটি সুযোগ, কারণ এখানে চীন-ভিত্তিক অনেক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক এড়াতে দক্ষিণে চলে গেছে।

চীনের কর্মকর্তারা এই সফরকে স্থিতিশীল বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে তুলে ধরছেন।

ভিয়েতনাম কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র ‘নহান্দান’-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে শি জিনপিং লিখেছেন, বাণিজ্য যুদ্ধ বা শুল্ক যুদ্ধে কেউ জেতে না এবং সংরক্ষণবাদ ‘ভুল পথে চালিত করে’।

ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী ফাম মিনহ চিহ্নের সঙ্গে এক বৈঠকে শি জিনপিং একতরফাভাবে নিপীড়ন বন্ধ করার আহ্বান জানান।

সোমবার চীন ও ভিয়েতনামের মধ্যে রেল যোগাযোগসহ ৪৫টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে জানা গেছে।

ওয়াশিংটনের চাপের মুখে ভিয়েতনাম চীনের সঙ্গে কিছু বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ জোরদার করছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট এবং ভিয়েতনামের তো ল্যাম পারস্পরিক শুল্ক হ্রাস করতে রাজি হয়েছেন।

ভিয়েতনামসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছে।

কারণ, এই অঞ্চলের দেশগুলো আশঙ্কা করছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিষিদ্ধ চীনা পণ্যের জন্য এটি একটি সম্ভাব্য ‘ডাম্পিং জোন’ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

ভিয়েতনামের অর্থনীতি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।

দেশটি চীনের কাছ থেকে আমদানি এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানির উপর নির্ভরশীল।

অনেক দেশ এই অঞ্চলে চীনের প্রভাবের মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রকে একটি ভারসাম্য শক্তি হিসেবে মূল্যায়ন করে।

ভিয়েতনামের গবেষণা কর্মকর্তা ফান কুয়ান ডুং বলেছেন, অতীতে এমনটা দেখা গেছে যে ভিয়েতনাম চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করার পাশাপাশি আগামী মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র বা অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করবে।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে বিশ্বের বৃহত্তম এই দুই অর্থনীতির ‘বিচ্ছিন্নতা’ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

তবে, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট এই উদ্বেগকে দূর করতে চেয়েছেন।

আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মাইলির সঙ্গে সাক্ষাতের পর বেসেন্ট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোকে চীনের সঙ্গে করা ‘ক্ষতিকর’ চুক্তিগুলো এড়াতে সহায়তা করতে চাইছে।

আর্জেন্টিনায় চীনা দূতাবাস বেসেন্টের বিরুদ্ধে চীনের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও মানহানিকর’ মন্তব্য করার অভিযোগ এনেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ‘পথরোধ’ করা থেকে বিরত থাকতে বলেছে।

হোয়াইট হাউস সম্প্রতি শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা করেছে।

স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, সেমিকন্ডাক্টর এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক তুলে নেওয়ায় চীন কিছুটা সুবিধা পাবে।

তবে, ট্রাম্প এবং তার শীর্ষ সহযোগীরা বলছেন, এই ছাড়গুলো ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং এগুলো কেবল অস্থায়ী হবে।

শি জিনপিং হ্যানয়ে দু’দিনের সফর শেষে মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়া সফর করবেন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *