শিরোনাম: সুইডেনে ‘স্লো টিভি’ – মহিষের পথচলা ক্যামেরাবন্দী, মুগ্ধ দর্শক লক্ষ লক্ষ
টিভি’র পর্দায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে একই দৃশ্য! শুনতে অবাক লাগলেও, এমন এক অভিনব ধারণার সাক্ষী হয়েছে সুইডেন। দেশটির জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যম এসভিটি’র (SVT) কল্যাণে, ‘দ্য গ্রেট মুজ মাইগ্রেশন’ (The Great Moose Migration) নামের একটি ‘স্লো টিভি’ অনুষ্ঠান ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
এই অনুষ্ঠানে ক্যামেরাবন্দী করা হয় উত্তর সুইডেনের কুলবার্গ এলাকার কাছাকাছি অঞ্চলের অ্যাঙ্গারম্যান নদী পাড়ি দেওয়া মহিষদের বার্ষিক অভিবাসন।
সাধারণত, মে মাসের শুরু পর্যন্ত, এই লাইভ স্ট্রিমিং চলে। দর্শকরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করেন, কখন তাদের প্রিয় মহিষগুলো ক্যামেরার সামনে দিয়ে যাবে।
প্রকৃতির এই নিস্তব্ধ রূপ মানুষকে এতটাই টানে যে, ২০১৯ সালে অনুষ্ঠানটি যখন প্রথমবার সম্প্রচারিত হয়, তখন প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ এটি উপভোগ করে। আর ২০২৪ সালে, এসভিটি প্লে-তে অনুষ্ঠানটির দর্শক সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৯০ লাখে!
মূলত, উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে মহিষদের চলাচল একটু আগেভাগেই শুরু হয়ে যায়। আর তাই, নির্ধারিত সময়ের এক সপ্তাহ আগেই সম্প্রচার শুরু করতে হয় ‘দ্য গ্রেট মুজ মাইগ্রেশন’।
অনুষ্ঠানটির নির্মাতারা জানান, উত্তর সুইডেনের জঙ্গলে প্রায় ৩ লক্ষাধিক মহিষের বসবাস। এদের মধ্যে পুরুষ মহিষেরা কাঁধের দিক থেকে প্রায় ২১০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে এবং এদের ওজন হতে পারে প্রায় ৪৫০ কিলোগ্রাম।
সাধারণত এরা শান্ত ও একা থাকতে পছন্দ করে।
অনুষ্ঠানটির আকর্ষণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে সুইডেনের ইয়োনকোপিং বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া ও কমিউনিকেশন বিভাগের অধ্যাপক আনেত হিল বলেন, “স্লো টিভি’র ধারণাটি এসেছে মূলত রিয়েলিটি টিভি থেকে। তবে, এখানে কোনো সাজানো দৃশ্য থাকে না।
ফলে, দর্শকদের কাছে এটি আরও বেশি বাস্তব ও আকর্ষণীয় মনে হয়।”
অনুষ্ঠানটির প্রকল্প পরিচালক ইয়োহান এরহাগ জানিয়েছেন, মহিষদের এই পথচলা ক্যামেরাবন্দী করার জন্য প্রায় ২০,০০০ মিটার তার এবং ২৬টি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও, রাতের দৃশ্যের জন্য রয়েছে বিশেষ ক্যামেরা ও ড্রোন।
প্রায় ১৫ জন কর্মী এই কাজটি করে থাকেন।
তবে, এই অনুষ্ঠানের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো এর দর্শকপ্রিয়তা। যারা নিয়মিত এই অনুষ্ঠান দেখেন, তাদের মধ্যে উল্লা মালমগ্রেন অন্যতম।
তিনি বলেন, “আমি ঘুমকে ছুটি দিয়েছি! একটানা এই অনুষ্ঠান দেখি। কখন একটা মহিষ আসবে, সেই অপেক্ষায় থাকি।” উইলিয়াম গার্প লিলজেফোর্স নামের এক দর্শক জানান, তিনি ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১৫০টির বেশি মহিষের খেলনা সংগ্রহ করেছেন।
প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিচার করলে, বন্যপ্রাণী বিষয়ক অনুষ্ঠান বা প্রকৃতি বিষয়ক লাইভ স্ট্রিমিংয়ের ধারণা নতুন নয়। সুন্দরবনের বাঘ কিংবা কুমির অথবা অন্যান্য বন্যপ্রাণীর জীবনযাত্রা নিয়ে তৈরি বিভিন্ন তথ্যচিত্র ও লাইভ প্রোগ্রামিং-এরও দর্শকপ্রিয়তা রয়েছে।
‘দ্য গ্রেট মুজ মাইগ্রেশন’-এর এই অভূতপূর্ব সাফল্য যেন প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে চাওয়া মানুষের এক অন্যরকম দৃষ্টান্ত।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস