আতঙ্ক! সিম অদলবদলে সর্বস্বান্ত, ইই-এর বিরুদ্ধে গ্রাহকের ক্ষোভ!

শিরোনাম: সিম সোয়াপ জালিয়াতি: গ্রাহকের অভিযোগ সত্ত্বেও ব্যবস্থা নেয়নি মোবাইল কোম্পানি, বাংলাদেশের জন্য সতর্কবার্তা।

সাম্প্রতিক এক ঘটনায়, যুক্তরাজ্যের একজন বাসিন্দা, যিনি তার মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার কাছে সিম অদলবদলের (সিম সোয়াপ) বিষয়ে অভিযোগ করেছিলেন, তাদের কাছ থেকে প্রতিকার পাননি। এই ঘটনাটি বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল ব্যবহারকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

সিম সোয়াপ জালিয়াতি আসলে কী?

সিম সোয়াপ জালিয়াতি হলো এমন একটি প্রতারণা যেখানে অপরাধীরা একটি মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাকে তাদের শিকারের মোবাইল নম্বরটি তাদের নিজস্ব সিম কার্ডে স্থানান্তর করতে রাজি করায়। এর মাধ্যমে তারা ভুক্তভোগীর মোবাইল নম্বরের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং সেই নম্বরের সাথে যুক্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নেয়।

যুক্তরাজ্যের ঘটনা: একটি সতর্কবার্তা

যুক্তরাজ্যের বাথ-এর বাসিন্দা জে.এন.-এর ঘটনাটি এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা ‘ইই’ (EE) তাকে জানায় যে তার সিম অ্যাক্টিভেশন করার অনুরোধ প্রক্রিয়া করা হচ্ছে এবং নতুন সিমটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চালু হবে। জে.এন. এই ধরনের কোনো অনুরোধ করেননি।

তাৎক্ষণিকভাবে তিনি বিষয়টি ইই-কে জানান। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পর, তার মোবাইল পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায় এবং তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উধাও হয়ে যায়। জালিয়াতকারীরা তার ফোনে প্রবেশ করে তার আর্থিক, খুচরা এবং কিছু সামাজিক মিডিয়া অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড ও লগইন পরিবর্তন করে ফেলেছিল।

সবচেয়ে খারাপ হলো, হ্যাকাররা তার দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইমেইল অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং তাদের নিজস্ব ‘টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন’ সেট আপ করে। ফলস্বরূপ, তিনি তার অ্যাকাউন্টগুলো পুনরুদ্ধার করতে পারেননি এবং তার সারা জীবনের মোবাইল নম্বরটি হারিয়ে ফেলেন।

ইই-এর প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনার পরে, ইই জানায় যে তাদের এবং জালিয়াতকারীর মধ্যে কথোপকথন একই সময়ে হয়েছিল। যখন জে.এন. সন্দেহজনক কার্যকলাপের কথা জানাতে ফোন করেন, ততক্ষণে জালিয়াতকারীরা সিম অ্যাক্টিভেশনের শেষ পর্যায়ে ছিল। যদিও জে.এন.-এর অ্যাকাউন্টটি চিহ্নিত করা হয়েছিল, তবে ততক্ষণে সিম অ্যাক্টিভেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল।

ইই-এর মতে, ২৪ ঘণ্টার এই সময়সীমা গ্রাহকদের সিম পরিবর্তনের অনুরোধ না করলে তা জানানোর জন্য দেওয়া হয়। তবে এই ক্ষেত্রে, গ্রাহক অভিযোগ করা সত্ত্বেও, ইই-এর কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকি

বাংলাদেশে বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং এবং ডিজিটাল আর্থিক সেবার ব্যবহার ব্যাপক হারে বাড়ছে। বিকাশ (bKash), নগদ (Nagad)-এর মতো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের (MFS) জনপ্রিয়তা এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। এই পরিস্থিতিতে, সিম সোয়াপ জালিয়াতির ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে।

যদি কোনো জালিয়াত আপনার সিম কার্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে, তবে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, মোবাইল ব্যাংকিং এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের নিরাপত্তা চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।

নিজেকে রক্ষা করবেন যেভাবে

  • আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন – জন্ম তারিখ, ঠিকানা বা পিন নম্বর কারও সাথে শেয়ার করবেন না।
  • অপরিচিত বা সন্দেহজনক কল বা মেসেজের উত্তর দেবেন না।
  • আপনার মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারীর সাথে যোগাযোগ করে আপনার অ্যাকাউন্টে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা সক্রিয় করুন.
  • নিয়মিত আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং অন্যান্য আর্থিক লেনদেনের উপর নজর রাখুন.
  • সন্দেহজনক কিছু নজরে এলে, দ্রুত আপনার মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী এবং উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করুন।

সতর্ক থাকুন, সুরক্ষিত থাকুন

সিম সোয়াপ জালিয়াতি একটি গুরুতর সমস্যা এবং এটি যে কারো সাথে ঘটতে পারে। বাংলাদেশের মোবাইল ব্যবহারকারীদের জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি যে তারা এই ধরনের প্রতারণা সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং নিজেদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

কোনো সন্দেহজনক কিছু দেখলে, দ্রুত ব্যবস্থা নিন এবং আপনার মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করুন।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *