খাবার এখন শুধু ক্ষুধা নিবারণের বস্তু নয়, বরং বিলাসিতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। বাজারে উপলব্ধ সাধারণ খাদ্যসামগ্রীর আকর্ষণীয় মোড়ক, উচ্চ মূল্য এবং ফ্যাশন দুনিয়ায় তাদের উপস্থিতি—এসবই যেন নতুন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে।
বিষয়টি এমন দাঁড়িয়েছে যে, খাদ্য এখন মানুষের সামাজিক অবস্থান নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
পশ্চিমা বিশ্বে খাদ্য বিষয়ক এই নতুন প্রবণতা বেশ কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, টমেটোর সুগন্ধিযুক্ত একটি সাবান পাওয়া যাচ্ছে, যার দাম প্রায় ৮৫ মার্কিন ডলার। এছাড়া, একটি ভুট্টা আকৃতির টুল-এর দাম প্রায় ২৫০ ডলার, সার্ডিনের ছবিযুক্ত টি-শার্ট পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ৮০ ডলারে।
এমনকি, পাস্তা বক্সের আদলে তৈরি একটি হ্যান্ডব্যাগ-এর দাম শুনলে চোখ কপালে উঠবে, যার মূল্য প্রায় ১,৫০০ ডলার।
এই পরিবর্তনের মূল কারণ হল খাদ্যপণ্যের ক্রমবর্ধমান দাম এবং খাদ্য বিষয়ক রুচির পরিবর্তন। খাদ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং খাদ্য বিষয়ক প্রবণতা বিশ্লেষক আন্দ্রেয়া হার্নান্দেজের মতে, মিলিনিয়াম প্রজন্মের হাত ধরেই এই ‘প্রিমিয়াম প্যান্ট্রি’র ধারণা তৈরি হয়েছে।
তাঁরা তাঁদের দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিসপত্রের উন্নত সংস্করণ কেনায় বেশি আগ্রহী। উদাহরণস্বরূপ, সাধারণ জলপাই তেলের বদলে তাঁরা বেছে নিচ্ছেন আকর্ষণীয় মোড়কের বিশেষ জলপাই তেল, অথবা সাধারণ হট সসের পরিবর্তে কিনছেন দামি হট সস।
হার্নান্দেজ আরও বলেন, এটি এক ধরণের ‘সাশ্রয়ী বিত্তের’ ধারণা। বর্তমানে অনেক কিছুই মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।
তাই, খাদ্য এবং স্ন্যাকস-এর প্রতি মানুষের মনোযোগ বাড়ছে। খাদ্য বিষয়ক এই বিলাসিতা শুধু খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। পোশাক থেকে শুরু করে ঘর সাজানোর বিভিন্ন সামগ্রীতেও এর প্রভাব পড়েছে।
বিষয়টি কেবল ফ্যাশন বা রুচির পরিবর্তন নয়। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এটি একটি সামাজিক ইঙ্গিতও বটে। বর্তমান সময়ে যখন অনেক মানুষের পক্ষেই খাদ্য কেনা কঠিন হয়ে পড়েছে, তখন খাদ্য বিষয়ক এই বিলাসিতা সমাজে একটি বিশেষ শ্রেণির মানুষের ক্ষমতা এবং প্রাচুর্যকে তুলে ধরে।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, খাদ্য এখন একটি স্ট্যাটাস সিম্বল।
খাবার নিয়ে এই নতুন ধারণা আমাদের সমাজে গভীর প্রভাব ফেলছে। খাদ্য বিষয়ক এই প্রবণতা একদিকে যেমন মানুষের ক্রয়ক্ষমতা এবং রুচির পরিবর্তনকে নির্দেশ করে, তেমনি সমাজের ধনী-দরিদ্রের বিভাজনকেও স্পষ্ট করে তোলে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন