গাজায় একটি হাসপাতালে ইসরায়েলি বিমান হামলার ঘটনা ঘটেছে, এতে এক চিকিৎসক নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও নয় জন। মঙ্গলবার দেইর আল-বালাহ এলাকার কুয়েতি ফিল্ড হাসপাতালের উত্তর গেটে আঘাত হানে এই হামলা। হাসপাতাল সূত্রে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
হামলার সময় হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রী ও আশ্রয়প্রার্থীদের আনাগোনা ছিল। মুখপাত্র সাবের মোহাম্মদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আহতদের মধ্যে রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মী উভয়ই রয়েছেন এবং গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন অন্তত দুজন রোগী।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে এই ঘটনার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে, গত ১৮ মাস ধরে চলা এই যুদ্ধে হাসপাতালগুলোতে হামলার ঘটনা নতুন নয়। এর আগে, হামাস যোদ্ধারা হাসপাতালগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে বা সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে এমন অভিযোগ তুলে সামরিক বাহিনী বেশ কয়েকবার হাসপাতালগুলোতে হামলা চালিয়েছে।
যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, ইসরায়েল বেসামরিক নাগরিকদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলছে এবং গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে।
সম্প্রতি, উত্তর গাজায় জরুরি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী আল-আহলি হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সেখানকার জরুরি বিভাগ, ফার্মেসি এবং আশেপাশের ভবনগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ঘটনার আগে হাসপাতাল থেকে রোগীদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সরিয়ে নেওয়ার সময় এক রোগীর মৃত্যু হয়।
জেরুজালেমের এপিসকোপাল ডায়োসিস, যারা এই হাসপাতালটি পরিচালনা করে, তারা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
ইসরায়েল অবশ্য দাবি করেছে, তারা ওই হাসপাতালের ভেতরে থাকা হামাসের একটি কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টারকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল, তবে তারা এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধাদের হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই ছিলেন বেসামরিক নাগরিক। এছাড়া, ২৫১ জনকে অপহরণ করা হয়।
বর্তমানে গাজায় এখনও ৫৯ জন জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত আছে বলে ধারণা করা হয়।
গাজায় ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলায় এখন পর্যন্ত ৫১,০০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে যুদ্ধবিরতি ভেঙে দেওয়ার পর ইসরায়েল নতুন করে হামলা শুরু করে।
এতে হামাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতার আলোচনা ভেস্তে যায়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিকিৎসা পেশাদারদের দ্বারা পরিচালিত হলেও এটি হামাস-নিয়ন্ত্রিত সরকারের অধীনে কাজ করে। জাতিসংঘের সংস্থা এবং স্বাধীন বিশেষজ্ঞরা এই মন্ত্রণালয়ের দেওয়া হতাহতের সংখ্যাকে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করে। যদিও ইসরায়েল এই সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা প্রায় ২০,০০০ জন হামাস সদস্যকে হত্যা করেছে, তবে তারা এর কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।
মন্ত্রণালয় জানায়, নিহতদের মধ্যে কতজন বেসামরিক নাগরিক এবং কতজন যোদ্ধা, সে বিষয়ে তারা বিস্তারিত জানায়নি। তবে, নিহতদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু রয়েছে।
এই হামলায় গাজার অধিকাংশ এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে এবং প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনি বাসিন্দার মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস