ট্যাক্স দিয়েও বিতাড়নের ভয়? অভিবাসীদের মনে বাড়ছে আতঙ্ক!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী কাগজপত্রবিহীন অভিবাসীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজস্ব পরিষেবা (আইআরএস) এবং স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগের (ডিএইচএস) মধ্যে সম্প্রতি স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি এই উদ্বেগের মূল কারণ।

এই চুক্তির ফলে এখন ডিএইচএস, আইআরএস-এর কাছ থেকে ওইসব অভিবাসীর ট্যাক্স সংক্রান্ত তথ্য জানতে পারবে, যারা এতদিন ধরে কর পরিশোধ করে আসছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা অনেক কাগজপত্রবিহীন অভিবাসী, যারা নিয়মিতভাবে ট্যাক্স দিয়ে আসছিলেন, তাদের মধ্যে এখন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের আশঙ্কা, কর দেওয়ার এই তথ্য এখন তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করা হতে পারে এবং এর ফলস্বরূপ তাদের বিতাড়িতও করা হতে পারে।

বিভিন্ন অভিবাসী অধিকার সংগঠন এই চুক্তির তীব্র বিরোধিতা করছে।

আইআরএস-এর নিয়ম অনুযায়ী, যারা সামাজিক নিরাপত্তা নম্বরের (সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর) যোগ্য নন, তাদের জন্য একটি বিশেষ ট্যাক্স আইডি নম্বর (আইটিআইএন) ব্যবহার করে ট্যাক্স ফাইল করার সুযোগ রয়েছে। এই আইডি ব্যবহার করে বহু বছর ধরে অসংখ্য কাগজপত্রবিহীন অভিবাসী নিয়মিতভাবে তাদের ট্যাক্স পরিশোধ করে আসছেন।

কিন্তু নতুন চুক্তির ফলে তাদের মধ্যে এখন ভীতি কাজ করছে। তারা মনে করছেন, এত দিন ধরে তারা যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আসছিলেন, তা এখন তাদের বিপদের কারণ হতে পারে।

ফ্লোরিডা ইমিগ্র্যান্ট কোয়ালিশনের অ্যাড্রিয়ানা রিভেরা জানিয়েছেন, “অনেক মানুষ নিজেদের প্রতারিত মনে করছেন।” তিনি আরও বলেন, “এই চুক্তির কারণে মানুষ এখন দ্বিধায় পড়েছে যে তারা ট্যাক্স দেওয়া চালিয়ে যাবে কিনা।

কারণ তারা ট্যাক্স দেওয়ার গুরুত্ব বোঝে, এর বৈধতা সম্পর্কে অবগত এবং এই দায়িত্ব পালনে তারা সবসময় প্রস্তুত। কিন্তু এখন তাদের মনে হচ্ছে, এই ট্যাক্স দেওয়াটাই তাদের পরিবারের বিচ্ছিন্নতা এবং সম্ভবত জীবননাশের কারণ হতে পারে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বড় ধরনের রাজস্ব হারাতে পারে। ইয়েল ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণা কেন্দ্র অনুমান করেছে, আগামী দশকে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রাজস্ব কমতে পারে।

এই চুক্তির বিরুদ্ধে এরই মধ্যে আইনি লড়াই শুরু হয়েছে। অভিবাসী অধিকার বিষয়ক দুটি সংগঠন একটি মামলা দায়ের করেছে।

তাদের যুক্তি হলো, অভিবাসন বিষয়ক কার্যক্রমের জন্য ট্যাক্স ডেটা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি ফেডারেল আইন লঙ্ঘন করে। তাদের মতে, সরকার এই চুক্তির মাধ্যমে একটি বৃহত্তর নজরদারির প্রক্রিয়া শুরু করতে চাইছে।

অন্যদিকে, স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এই চুক্তির মাধ্যমে তারা অপরাধীদের চিহ্নিত করতে পারবেন।

তবে সমালোচকরা বলছেন, চুক্তিতে শুধু অপরাধীদের কথা উল্লেখ করা হয়নি, বরং এতে যে কারও তথ্য ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে, অভিবাসী অধিকার সংগঠনগুলো অভিবাসীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করার চেষ্টা করছে এবং তাদের অধিকার সম্পর্কে অবগত করছে।

একই সঙ্গে তারা সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে এই চুক্তির ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কোনো সমাধান খুঁজে বের করা যায়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *